কমছে পেঁয়াজের দাম
হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারী ও খুচরা দুই বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার ও রামপুরা বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার শ্যামবাজার। বৃহস্পতিবার এই বাজারে গতকালের চেয়ে কেজিপ্রতি ৮ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৩-৫৪ টাকা কেজিতে।
প্রায় একই চিত্র রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। এই বাজারে ৫০-৫৫ টাকা কেজিতে পাইকারী দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে দেশি সবচেয়ে ভালো পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে। আর ফরদিপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৩-৫৪ টাকা কেজিতে। আর ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। তবে খুচরা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা কেজিতে।
এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর রামপুরা ও মালিবাগ এলাকার বাজারেও। এই বাজারগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
শ্যামবাজারে ব্যবসায়ী হাজী মাজেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পূজা ও বন্যার কারণে আমদানি কমায় পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহ বেড়েছিল। এখন পেঁয়াজের আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, এটা তো পাইকারী বাজার। গতকালও ৬৩ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। তবে আজকে বিক্রি করছি ৫৩- ৫৫ টাকায়।
প্রায় একই কথা বলেন কারওয়ান বাজারের গৌতম বাবু। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশি পাবনার পেঁয়াজের পাল্লা ২৮০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ২৬০-৭০ টাকা আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫০ টাকা পাল্লায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, খুচরা পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৫৫ টাকায় কেজি। তবে ৫ কেজির কম বিক্রি করছি না।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী অনন্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৬২ টাকা কেজি। দুদিন আগেও ৭০- ৭৩ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি তাই কম দামে বিক্রি করতে পারছি। কোনো জিনিসের দাম বাড়লে সেই জিনিস কম বিক্রি হয়। ফলে গত কয়েকদিন পেঁয়াজ বিক্রি কমেছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী রুহুল আমীন হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ আজ বিক্রি করেছি ৭০-৭৫ টাকা কেজি। আকারে একটু ছোট দেশি পেঁয়াজ বিক্রি কিনেছি ৬৫-৬৮ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৬৫ টাকা কেজিতে।
তিনি বলেন, গতকালও দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এরপর সন্ধ্যায় পেঁয়াজ শ্যামবাজার আড়তে গিয়ে দেখি পেঁয়াজের দাম কমেছে। ফলে এখন দম দামে বিক্রি করছি। ৮০-৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ভালো মানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে এখন ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ভারতের পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম আরও কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, দেশে করোনা মহামারির শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছিল। সাধারণ ক্রেতাদের ধারণা ছিল সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে দাম কমবে। প্রায় এক মাস ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের দামের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাবই পড়ছে না। উল্টো আগের তুলনায় অনেক পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।
গত ২০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। ২০ দিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। যদিও দেশে প্রায় পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত থাকার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তার ভাষ্য মতে, মজুত থাকা পেঁয়াজ দিয়ে আরও অন্তত দুই-তিন মাসের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারতে বন্যার অজুহাতে পেঁয়াজ আমদানি করেও বাজারে বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অব্যাহতভাবে বাড়ছে পণ্যটির দাম।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়া পূজার কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি প্রায় বন্ধ। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে।
ফলে বুধবার পর্যন্ত প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৮০-৮৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকায়। অথচ ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৫-৪০ টাকায়।
এদিকে করোনার কারণে দেশে অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছে। যারা ব্যবসা কিংবা চাকরি করছেন তাদেরও আয় কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি বিপাকে ফেলেছে সাধারণ ক্রেতাদের। তারা রাস্তায় নামতে শুরু করে।
এমআই/ওএফ