পুঁজিবাজারে তিন বছরে ৪ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে চায় ওয়ালটন
শেয়ার অফলোড করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে নতুন শিল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। নতুন পরিকল্পনা অনুসারে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা প্রয়োজনে এক বছরের পরিবর্তে দুই ধাপে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৯টি শেয়ার অফলোড করতে চায়।
প্রথম ধাপে আগামী তিন বছরের মধ্যে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৪টি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে চায়। তিন বছরের মধ্যে বাজারে ওয়ালটনের লেনদেনযোগ্য শেয়ার হবে পাঁচ শতাংশ। এরপরও যদি প্রয়োজন হয় তবে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আরও পাঁচ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানটি।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে এই প্রস্তাব করেছে ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
গত রোববার ওয়ালটনসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে আগামী এক বছরের মধ্যে বাজারে ন্যূনতম ১০ শতাংশ ফ্রি ফ্লোট শেয়ার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বর্তমানে বাজারে দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ওয়ালটনের। প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ৯ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে হবে।
এ খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় ওয়ালটনের শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে। দুই দিনের প্রায় পৌনে ২শ টাকা দাম কমে শেয়ারটির । এই অবস্থায় ওয়ালটনের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) গোলাম মুর্শেদ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে নতুন শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো।
এ বিষয়ে ওয়ালটন এমডি ও সিইও গোলাম মুর্শেদ বলেন, নিয়ম-নীতি মেনেই ব্যবসাসহ সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ওয়ালটন। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারী ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা দেখা করি। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে বাজারে পাঁচ শতাংশ শেয়ারে উন্নীত করতে বিএসইসির কাছে ওয়ালটনের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের আবেদন ছিলো। বিএসইসির চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিভাবক। পুঁজিবাজারের সামগ্রিক স্বার্থে তিনি ওয়ালটনের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের আবেদন বিবেচনা করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লক-ইন পিরিয়ডে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ার বাজারে ছাড়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএসইসির অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় আরও শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে ওয়ালটনের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা একমত হয়েছেন।’
এ বিষয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা জানান, ওয়ালটনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বলছেন, এ মুহূর্তে তাদের এত অর্থের প্রয়োজন নেই। তাই তারা এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর বা আরো বেশি সময় নিয়ে শেয়ার ছাড়তে চান। আমরা তাদের জানিয়েছি যে ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তেই হবে এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া সম্ভব নয়। তবে সময় বাড়ানোর বিষয়ে তাদের লিখিতভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৩৯, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ১০ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হারে ওয়ালটনের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ২ কোটি ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৯টি শেয়ার ছাড়তে হবে। গতকালের বাজারদর অনুযায়ী এ শেয়ারের মূল্য ৩ হাজার ৬০৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
এমআই/এনএফ