জামানতবিহীন সহজ শর্তে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন কৃষক
>> জামানতবিহীন ২ লাখ টাকা ঋণ পাবেন কৃষক
>> ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৪ শতাংশ
>> খেলাপিরা ঋণ পাবে না
>> এ স্কিমের অর্থে পুরাতন ঋণ সমন্বয় করা যাবে না
করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলায় কৃষকের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিল থেকে জামানতবিহীন সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন কৃষক।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে।
দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশেষ প্রণোদনায় পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় কৃষি খাতের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব এ তহবিলের মেয়াদি হবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।
পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা নিতে ইচ্ছুক তফসিলি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করবে। ব্যাংকগুলোর কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা, ঋণ বিতরণের সক্ষমতার ভিত্তিতে কৃষি ঋণ বিভাগ তহবিল বরাদ্দ দেবে।
এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষক ও গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতাভুক্ত খাতে বিতরণ করা ঋণের বর্তমান গ্রহীতাদের মধ্য থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও গ্রাহককে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক নিজ ব্যাংক থেকে প্রদত্ত বিদ্যমান ঋণ সুবিধার অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ (সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা) এ স্কিমের আওতায় বিতরণ করতে পারবে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের অনুকূলে শস্য ও ফসল চাষের জন্য এককভাবে জামানত বিহীন (শুধুমাত্র ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে) সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা যাবে।
গৃহস্থালি পর্যায়ে গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ খাতে ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণদানে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শস্য ও ফসল ঋণ ব্যতীত অন্যান্য খাতের ঋণে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম জামানত ও সহায়ক জামানত নিতে পারবে। এ স্কিমের ঋণ কোনোভাবেই গ্রাহকের পুরাতন ঋণ সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। ঋণ খেলাপিরা এ স্কিমের আওতায় ঋণ পাবে না।
এ স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে পারবে। কৃষক পর্যায়ে সুদ বা মুনাফা হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ (সরল হারে)। এ সুদহার নতুন ও পুরাতন সব গ্রাহকের জন্য প্রযোজ্য হবে।
কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত শস্য ও ফসল খাতের আওতাভুক্ত দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাক সবজি, কন্দাল ফসল (আমদানি বিকল্প ফসলসমূহ যথা- ডাল, তৈলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদ হারে ঋণ বিতরণের পৃথক স্কিম চালু থাকায় এ খাত ব্যতীত), ফল ও ফুল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাত, কৃষি ও সেচ যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদন খাতসমূহে ঋণ বিতরণ করা যাবে। ব্যাংকের বরাদ্দ করা তহবিলের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।
অংশগ্রহণকারী ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক ১৮ মাসের (১২ মাস + গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস) মধ্যে আসল এবং সুদ/মুনাফা (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ/মুনাফা হারে) পরিশোধ করবে।
কৃষক পর্যায়ে শস্য ও ফসল খাতে বিতরণ করা ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ১২ মাস। এছাড়া, অন্যান্য খাতে বিতরণ করা ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ন্যূনতম ৩ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত বছর করোনার প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ৮৬ শতাংশ অর্থাৎ চার হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
এসআই/ওএফ