ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে পেপারফ্লাই
বকেয়া পাওনা আদায়ে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে প্রযুক্তি খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান পেপারফ্লাই। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, বর্তমানে ইভ্যালির কাছে এর বকেয়ার পরিমাণ ৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেপারফ্লাই-এর চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) রাহাত আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশজুড়ে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার মাশুল হিসেবে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া হলেও গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালি কোনো বিল পরিশোধ করেনি। আমরা কয়েকবার বকেয়া আদায়ে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও ইভ্যালির কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি।
তিনি বলেন, এখন আমরা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে গত সোমবার পেপারফ্লাইয়ের পক্ষ থেকে ইভ্যালির ঠিকানায় উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের উত্তর পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের কাছে ইভ্যালির বকেয়া ২০৫ কোটি টাকার বেশি।
সাধারণ মানুষকে বাজারের চেয়ে কম দামে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা নেওয়ার উদ্যোগ হিসেবে সাইক্লোন (পরবর্তীতে টিটেন নামকরণ) অফার দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়ার চর্চা ই-কমার্স খাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গ্রাহক এবং ব্যবসায় অংশীদারদের কাছে ৪০৩ কোটি টাকার দেনা রয়েছে ইভ্যালির। প্রতিষ্ঠানটির অস্থাবর সম্পদের মূল্য মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে।
সবশেষ আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছিল তা থেকে সরে এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ যমুনা।
২৭ আগস্ট ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির নামে পরিচালিত সব ধরনের অ্যাকাউন্টের তথ্য ও ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি লেনদেনের চেক বা রশিদের কপি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত বছরের আগস্টে ইভ্যালি এবং এর চেয়ারম্যান ও এমডির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এক মাসের জন্য স্থগিত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরই মধ্যে প্রতারণা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জে মামলা করা হয়েছে।
এর আগে, ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।
এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
১৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সম্পদ ও দায়ের হিসাব দেয় ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তার নিজের ব্র্যান্ড মূল্য ৪২৩ কোটি টাকা। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল কোম্পানিকে দিয়েছেন। বাকি ৫৪৩ কোটি টাকা হচ্ছে কোম্পানিটির চলতি দায়।
ইভ্যালি জানায়, দায়ের বিপরীতে তাদের চলতি সম্পদ রয়েছে ৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর সম্পত্তি, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি মিলিয়ে রয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে স্থাবর সম্পত্তি দাঁড়ায় ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা থেকে স্থাবর সম্পত্তি ১০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাদ দিলে বাকি থাকে ৪৩৯ কোটি টাকা, যাকে ইভ্যালি বলছে তার অস্থাবর সম্পত্তি।
বিবরণী মেলাতে ইভ্যালি দেখিয়েছে অস্থাবর সম্পত্তি ৪৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ৪২৩ কোটি টাকা হচ্ছে তার ব্র্যান্ড মূল্য, আর ১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা হচ্ছে অদৃশ্যমান সম্পত্তি।
সব মিলিয়ে ইভ্যালির মোট দেনার পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। এই দেনার বিপরীতে তাদের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য মোট সম্পদ রয়েছে ৫৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা।
এসআই/আরএইচ