ফরাসি চলচ্চিত্রের অবমাননাকর সংলাপ সরাতে রাষ্ট্রদূতকে ফের চিঠি
নেটফ্লিক্সের একটি চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে অবমাননাকর সংলাপ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে আবারও চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক রফতানিকারক ও মালিক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বুধবার বাংলাদেশে নিয়োজিত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহ বরাবর পাঠানো এবারের চিঠিতে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান চলচ্চিত্রটি থেকে প্রশ্নবিদ্ধ সংলাপটি সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এর আগে ৭ আগস্ট ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে এবং ৯ আগস্ট নেটফ্লিক্সকে আপত্তিকর সংলাপ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল বিজিএমইএ।
এবারের চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যবসা, অর্থনীতি আর সামাজিক বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার সম্পর্ক কয়েক দশক ধরেই বিরাজমান। আপনার এ সমর্থন দেওয়ার বিষয়টিকে সামনে রেখে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনাকে চিঠি দিয়েছিলাম। একটি বিষয়, যা কি না বাংলাদেশিদের হৃদয়কে ‘ভেঙে চুরে’ দিয়েছে, চিঠিতে তা উপস্থাপন করেছিলাম। ডেভিড শ্যারন পরিচালিত ‘লাস্ট মার্সেনারি’ নামে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ফরাসি মুভিতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য রয়েছে।
ফারুক হাসান তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ শুধুমাত্র যে আমাদের জাতির জন্য গর্বের বিষয়, তা নয়; তার চেয়েও এর বিস্তৃতি আরও বেশি। এর মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবময় আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরের ধারাবাহিকতায় পোশাক শিল্প আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গত তিন দশক ধরে অর্থনীতির অন্যান্য খাতগুলোতেও এ শিল্পের সরব পদচারণা প্রশংসিত হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পকে সব দিক থেকে নিরাপদ, সুরক্ষিত, সবুজ এবং টেকসই করার জন্য সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। সুরক্ষার জন্য সব নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করেছি এবং সেরা ব্যবসায়িক অনুশীলনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। তাই, এ ঘটনাগুলোর মাঝে যখন কি না কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিটি খাতকে বিপর্যস্ত করে চলেছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত, আন্তর্জাতিক বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাওয়ার পথে রয়েছে, তখন আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে এ ধরনের অযৌক্তিক ও আপত্তিকর মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এতে আরও বলা হয়, এর আগে আমরা নেটফ্লিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওই চলচ্চিত্রের পরিচালককে আমাদের এ উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। চলচ্চিত্রটি এখনও নেটফ্লিক্সের প্লে-লিস্টে আছে এবং চলচ্চিত্র থেকে সেই আপত্তিকর সংলাপগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়নি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং আপনার বেঞ্চের মাধ্যমে ফরাসি সরকার ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নবিদ্ধ সংলাপটি অনতিবিলম্বে অপসারণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা মানবাধিকার আইন ১৯৯৮ এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। তবে এটি অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে হবে। তারপরও জনপ্রতিনিধিরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষমতা রাখেন, যদি কি না সেটি কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত খ্যাতিকে বিনষ্ট করে। তারপরও বলা যায় যে, চলচ্চিত্রে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নিয়ে যে মন্তব্য আছে, তা সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারণ, বাংলাদেশ বুলেট প্রুফ জ্যাকেট তৈরি করে না। গত চার দশক ধরে আমরা যে পোশাক তৈরি করছি, তা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা ও ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করেছে তার গুণগত মান ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য দিয়ে।
অতএব, এটি একটি যুক্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি। বিজিএমইএ ও পোশাক শিল্প পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন এবং আপনার (রাষ্ট্রদূত) মাধ্যমে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে চলচ্চিত্রটি থেকে প্রশ্নবিদ্ধ সংলাপটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ জানায়, একই বিষয় অবহিত করে এবং সহযোগিতা চেয়ে বিজিএমইএ থেকে উল্লেখিত চলচ্চিত্রটির পরিচালক, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ডেভিড শ্যারন পরিচালিত ফরাসী চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’। ১১২ মিনিটের সিনেমাটি অ্যাকশন কমেডি ধাঁচের।
আরএম/আরএইচ