পুঁজিবাজার ছাড়লেন ৭ লাখ বিনিয়োগকারী
চাঙা অবস্থায়ও গত দুই মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন ছয় লাখ ৮৮ হাজার ৫৫৪টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্সধারী (বিও) বিনিয়োগকারী। এর মধ্যে জুলাই মাসে বাজার ছেড়েছেন ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮ জন আর জুন মাসে ছেড়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৪৫৬ জন। শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) নতুন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে লটারি প্রথা উঠে গেছে। এখান যারাই আবেদন করছেন তারাই সমহারে শেয়ার পাচ্ছেন। ফলে দীর্ঘদিনের পুরাতন নিয়মের আইপিও ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। এ কারণে হতাশ হয়ে বাজার ছাড়ছেন অনেকে।
নতুন পদ্ধতিতে আইপিওতে আবেদন করতে হলে বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থাকতে হয়। অর্থাৎ ২০ হাজার টাকার শেয়ার কেনা থাকতে হয়। পাশাপাশি আইপিওতে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার আবেদন করতে হবে।
এদিকে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর নতুন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর প্রথম দিন থেকেই সার্কিট ব্রেকার আরোপ করায় শেয়ারের দাম বাড়ছে খুব ধীরে। ফলে আগে যেখানে লেনদেন শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে ১০ টাকার শেয়ার সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ত, সেখানে এখন দুই সপ্তাহে ১০ টাকার শেয়ার ২০ টাকা পর্যন্তও উঠছে না। পক্ষান্তরে আইপিও ব্যবসার চেয়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে ব্যবসা করলে দ্বিগুণ মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা একশ, দুইশ কিংবা পাঁচশ বিও হিসাব ব্যবহার করে আইপিও ব্যবসা করছিলেন তারা এখন নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন।
সিডিবিএলের তথ্যমতে, জুন মাসের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৭টি। সেখান থেকে প্রায় ৭ লাখ কমে ৩১ জুলাই দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩টিতে।
নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ১ জুন পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৫টি। সেখান থেকে ৫ লাখ কমে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৪২টিতে দাঁড়িয়েছে। আর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪২টি নারী বিনিয়োগকারীদের বিও থেকে প্রায় ২ লাখ কমে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭৪টিতে দাঁড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৩টিতে। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৪২টি। আর নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭৪টি। এছাড়া কোম্পানির নামে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৪ হাজার ৪১৭টি। সব মিলিয়ে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭০ হাজারটিতে।
এক মাস আগে অর্থাৎ, ২৯ জুন বিনিয়োগকারীদের বিওর সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩১টি। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯টি আর নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৫২ হাজার ২৭৫টি। এছাড়া ১৪ হাজার ৭০৭টি ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা।
সার্বিক বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আইপিওর নতুন নিয়মের পাশাপাশি বিও হিসাবের বার্ষিক ফি না দেওয়ায় বেশকিছু বিও বন্ধ হচ্ছে। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। ফলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের চিত্র আমরা দেখতে পাব। প্রকৃতপক্ষে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চান, তারা বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
জামানত ও ঝুঁকি ছাড়াই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী আইপিও ব্যবসা করেছেন। নতুন নিয়মে তারা হতাশ হয়েছেন। আগের মতো তারা আইপিও শেয়ার পাচ্ছেন না, আবার দ্রুত মুনাফা তুলেও নিতে পারছেন না। তাই নিরাশ হয়ে বাড়তি বিও হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন।
আইপিও ব্যবসা এতদিন কিছু বিনিয়োগকারীর হাতে ছিল বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, জামানত ও ঝুঁকি ছাড়াই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী আইপিও ব্যবসা করেছেন। নতুন নিয়মে তারা হতাশ হয়েছেন। আগের মতো তারা আইপিও শেয়ার পাচ্ছেন না, আবার দ্রুত মুনাফা তুলেও নিতে পারছেন না। তাই নিরাশ হয়ে বাড়তি বিও হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন।
এমআই/এসএসএইচ