রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আরও একটি প্রকল্পে কর সুবিধা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিজিক্যাল প্রটেকশন সিস্টেম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আমদানিকরা যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশে প্রযোজ্য অগ্রিম আয়কর থেকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সই করা আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ৭ জুলাই জারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আয়কর আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফিজিক্যাল প্রটেকশন সিস্টেম নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের কাজের আমদানিকরা যন্ত্রপাতির ওপর উৎসে অগ্রিম আয়কর থেকে শর্তসাপেক্ষে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শর্তগুলো হলো- ১. আমদানি করা পণ্যের আমদানিকারক হবে রাশিয়ার জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ফেডারেল সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড হাই টেকনিক্যাল স্পেশাল সাইন্টিফিক অ্যান্ড প্রডাকশন এন্টারপ্রাইজ এলিরন কিংবা তাদের নিয়োজিত প্রত্যক্ষ সাব-কন্ট্রাক্টর।
২. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ সংশ্লিষ্ট আমদানি বিলগুলো বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে।
৩. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্প চলাকালীন এ অব্যাহতি সুবিধা কার্যকর থাকবে।
৪. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এরূপ কোনো আমদানি বিলের ক্ষেত্রে ওই অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে না।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে শুরু থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতি মওকুফ সুবিধা প্রযোজ্য রয়েছে।
১৯৬১ সালে প্রথম পরামাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে রূপপুরকে বেছে নেওয়া হয়। তবে উদ্যোগ নিলেও পাকিস্তানের বৈরি মনোভাবে তা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেওয়া সেই উদ্যোগ সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি। ওই বছরই রাশিয়ার সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তি করে সরকার এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দুই দেশ চুক্তি করে।
২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য জেনারেল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই দিন পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
রাশিয়ার এ প্রতিষ্ঠানটি ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১ দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০ শতাংশ। আর রাশিয়ার অর্থায়ন বা ঋণ ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থ্যাৎ রাশিয়ার ৯০ শতাংশ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন হয়। আগামী ২০২৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
আরএম/এসএম