ভল্টের টাকা গায়েবের পর কী অবস্থা ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার
ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে পৌনে চার কোটি টাকা গায়েব হয়েছে অনেকটা সিনেমার গল্পের মতো কৌশলে। জানা গেছে, ভল্টের ১০০ টাকার বান্ডিলের দুই পাশে ৫০০ টাকার নোট এবং ৫০০ টাকার বান্ডিলের দুই পাশে ১০০০ টাকার নোট রেখে সবাইকে প্রতিনিয়ত বোকা বানিয়ে গেছেন শাখাটির দুই কর্মকর্তা।
ওই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বংশাল শাখার অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে ১৭ জুন পুলিশে সোপর্দ করেছে। তারা হলেন- শাখাটির ক্যাশ-ইনচার্জ রিফাজুল হক ও ম্যানেজার (অপারেশন) এমরান আহমেদ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নাটকীয় ওই ঘটনার পর এখন কী অবস্থা ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার?
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কার্যক্রম চললেও ব্যাংকের এই শাখাটির পরিস্থিতি কিছুটা থমথমে; কর্মীদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক। তবে সাধারণ গ্রাহকরা স্বাভাবিক নিয়মে লেনদেন করছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে ওই শাখার ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তবে আমাদের সাধারণ কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমরা গ্রাহকদের যথানিয়মে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ওই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু এটি অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয় তাই দুদক থেকে মামলা করেছে। এখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া আমাদের নিজস্ব তদন্ত চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
এদিকে শাখাটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায় তারা হতভম্ব। টাকা সরানোর কৌশল শুনে আরও অবাক হচ্ছেন তারা।
এ ঘটনায় কেউ কেউ আবার বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বিষয়টি যারা জেনেছেন তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন, অনেক কিছু জানতে চাচ্ছেন, যা খুবই বিব্রতকর।
আশা সালাম নামে একজন গ্রাহক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই শাখায় প্রায় সাত বছর লেনদেন করছি। এ ধরনের কোনো খবর কখনো শুনিনি। খবরে শুনেছি। আজকে একটা বিলের পেমেন্ট জমা দেবো বলে সকালে ব্যাংকে ফোন করেছিলাম, তারা জানিয়েছেন এটা তাদের নিজস্ব বিষয়, গ্রাহকের কোনো সমস্যা হবে না। তাই টাকা জমা দিয়ে গেলাম।
কবির নামে অপর এক গ্রাহক জানান, প্রায় চার কোটি টাকা গায়েব হয়েছে, আতঙ্ক তো হবেই। এতোগুলো টাকা সরানো সহজ বিষয় নয়। তবে খবরে তো এর চেয়ে বড় বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা শুনি। এটি ব্যাংকের বিষয়, আমাদের চিন্তা করে লাভ নেই। আমার একটি কাজ ছিল, এসেছি। সমাধান হয়েছে, চলে যাচ্ছি।
এখন পর্যন্ত জানা গেছে, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে গত ১৬ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আসামিরা কৌশলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা গায়েব করেছেন। তবে ব্যাংকের ক্যাশ খাতায় হিসাব মিলিয়ে রাখতেন তারা।
এ ঘটনায় দুদক যে মামলা দায়ের করেছে তার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৭ জুন ঢাকা ব্যাংকের আইসিসি ডিভিশনের ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন ইউনিট বাৎসরিক নিরীক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বংশাল শাখা পরিদর্শনে যায়। তদন্তে ইন্সপেকশন ইউনিট শাখাটির ভল্টে মোট ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার অসামঞ্জস্যতা খুঁজে পায়। তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাশ-ইনচার্জ রিফাজুল হক ২০২০ সালের আগস্ট থেকে গত ১৬ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অল্প অল্প করে ভল্ট থেকে টাকা সরানোর কথা স্বীকার করেন।
এসআই/এনএফ/জেএস