বানকোর অনিয়ম : অনিশ্চয়তায় আবু আহমেদসহ ১১ হাজার বিনিয়োগকারী
বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের অনিয়মের কারণে আটকে গেছে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদসহ ১১ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর লেনদেন। ফলে শেয়ার বিক্রি করেও টাকা হাতে পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। প্রয়োজন থাকার পরও শেয়ার বিক্রি করতে না পেরে চরম অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত হিসাবের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্রোকার হাউজটির পরিচালক ও পরিবারের সদস্যরা যাতে বিদেশে যেতে না পারেন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করেছে ডিএসই। এছাড়া চেয়ারম্যান ও এমডিসহ কোম্পানির বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, শেয়ার বিক্রি করে টাকা পেতে দীর্ঘদিন ধরে ব্রোকার হাউজটির পেছনে পেছনে ঘুরছেন তারা। ডিএসইকে জানিয়েছেন। কিন্তু এত দিনেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা। এখন হঠাৎ করে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। এসবের জন্য দায়ী ডিএসই। তারা যদি সঠিকভাবে মনিটরিং করত তাহলে ব্রোকাররা শেয়ারহোল্ডারদের টাকা আত্মসাৎ করতে পারত না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বানকোতে বিনিয়োগকারী আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রোকার হাউজ বন্ধে করে দেওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ডিএসই ও বিএসইসি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আজ বানকোর বিনিয়োগকারীরা পথে বসেছেন।
তিনি বলেন, হাউজটিতে আমারও বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমি শেয়ার বিক্রি করেছি। কিন্তু এখনো টাকা পাচ্ছি না। তাদের পেছনে ঘুরছি। আমরা পথে বসেছি। আমি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।
ব্রোকার হাউজ সূত্র মতে, আবু আহমেদ ও তার আত্মীয়স্বজনের বেশ কিছু বিও অ্যাকাউন্ট ছিল হাউজটিতে। এক থেকে দেড় বছর ধরে শেয়ার বিক্রি করেও টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না তিনি। এখন তিনি ডিএসইর শরণাপন্ন হয়েছেন।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অনেক দিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। ডিএসইও বিষয়টি আগে থেকে জানত। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ার পর আজকে বানকোর কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমরা বলেছি, গ্রাহকদের টাকা সমন্বয় করতে। গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করলেই ডিএসইর বোর্ড ব্যবস্থা নেবে। তারা বলছেন, দ্রুত গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করবেন। ব্যাংক গ্যারান্টি দেবেন।
মতিন বলেন, ডিএসই বিনিয়োগকারীদের সব স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করছে। ব্রোকার কর্তৃপক্ষ সব কিছু ঠিক করে নিয়ে আসলে বোর্ড লেনদেন চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। তবে কবে লেনদেন চালু হবে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে ব্রোকার হাউজটির চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিতের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বানকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আবদুল মুহিত ও পরিচালক (ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্বে) হিসেবে আছেন শফিউল আজম। সম্পর্কে তারা দুজন মামা-ভাগনে।
এমআই/ওএফ/জেএস