৫ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি
নানা শর্ত ও মহামারির অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল, তার ৯৫ শতাংশের বেশি পাঁচ মাসেই নিয়ে ফেলেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ মনে করছেন। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করে সরকার। কিন্তু প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার। এই অংক আগের বছরের একই সমেয়ের তুলনায় ২২৬ শতাংশ বেশি, লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ আর পুরো অর্থবছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি।
• পাঁচ মাসে বিনিয়োগ বেড়েছে ২২৬ শতাংশের বেশি।
• নভেম্বরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ ৩৪০৩ কোটি টাকা।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে নিট সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর জুলাই-জুন সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ৩ হাজার ৪০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা তার আগের বছরের একই মাসের চেয়ে দশ গুণেরও বেশি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল।
জাতীয় বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসাহের মধ্যে অন্যতম সঞ্চয়পত্র। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২৭ কোটি টাকা।
গেল অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা তার আগের অর্থবছরে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সেই হিসেবে গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছিল ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ।
জানা গেছে, এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে’র পর থেকে এই হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেওয়া হয়।
প্রতি মাসে যে টাকার সঞ্চয় স্কিম বিক্রি হয় তা থেকে আগে বিক্রি হওয়া যেসব স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে তার টাকা ও মুনাফা বিয়োগ করলে যে অর্থ থাকবে তা হচ্ছে নিট ঋণ। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এসআই/এইচকে