বাজেটে নতুন দরিদ্রদের জন্য কিছু নেই
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, করোনা মহামারিতে কর্ম হারিয়ে অনেকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। অনেকে পরবর্তীতে কাজ পেলেও তাদের আয় কমে গেছে। ফলে দারিদ্র্যের কাতারে চলে এসেছেন। আবার অনেকে দারিদ্র্য থেকে অতি দারিদ্র্যে নেমে গেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে যারা কর্ম হারিয়ে নতুন দরিদ্র হয়েছেন তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।
শুক্রবার (৪ জুন) ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সিপিডি পর্যালোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানি বাজেটে একটা দর্শন থাকে, কেন বাজেট হয়? বাজেটের মূল লক্ষ্য আয় বৈষম্য, ভোগ বৈষম্য ও সম্পদ বৈষম্যের হ্রাস করা, বাজেটে এটি একটি বড় ফিলোসফিক্যাল আর্গুমেন্ট। কিন্তু এবারের বাজেটে তা দেখিনি। যারা কর্মসংস্থান হারিয়ে নতুন দরিদ্র হয়েছে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রত্যক্ষ কোনো নির্দেশনা নেই। কিছু পরোক্ষ নির্দেশনা আছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা বেশি কাজে লাগে না। কারণ কিছু এটিআই কাস্টমস ছাড় দিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায় না।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে বাজেটকে ইতিবাচক বলেছেন, আমরাও ইতিবাচক বলছি। তবে অর্থনীতির ভাষায় একটা কথা আছে ‘প্রয়োজনীয়, কিন্তু যথেষ্ট নয়’ আমরা এটাই বলছি।
বাজেট কাঠামোতে দুর্বলতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে অনুমানের উপর বাজেট পেশ করা হয়েছে তা ঠিক ছিল না। প্রথম বছর কোভিডের সময় আমরা বেশ কিছু আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ দেখেছিলাম। অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য আনার জন্য এবারের বাজেটে কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পেনশন বাদ দেওয়া হলে আর তেমন বরাদ্দ থাকে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও বরাদ্দ আশানুরূপ নয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকালে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেটে বড় ঘাটতি নিয়ে ৫০তম প্রস্তাবিত বাজেট দেওয়া হয়। আলোচিত এই বাজেটে অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশাল এই ঘাটতির অর্থসংস্থান নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটির প্রশ্ন ঘাটতির বিশাল অংশ কোথা থেকে আসবে?
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেট ঘাটতির অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা বড় প্রশ্ন। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬.২ শতাংশ ধরা হয়েছে। বৈদেশিক উৎস থেকে বাজেট ঘাটতি পূরণের বিষয়টি ইতিবাচক দিক। এটা আকাঙ্ক্ষিত। তবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১০ মাসের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে পুরো অর্থবছর কেমন হতে যাচ্ছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গতিপ্রকৃতি ঠিক করা হয়নি। আমরা এখানে দুর্বল অবস্থায় রয়েছি।
এসআই/এসকেডি