ব্যবসায়ীরা চিন্তিত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি দর-কষাকষির আহ্বান

পণ্য আমদানিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নিয়মে বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে। যা এতদিন ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীরা চিন্তিত বলে জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি দর-কষাকষি করতে হবে, নিছক চিঠিপত্র আদান–প্রদান করে হবে না। তবে শুল্ক আরোপের পর এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে সরকার ঠিক পথেই এগোচ্ছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইসিসিবির সভাপতি। এ সময় তিনি ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষির বিষয়টি যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে সরকারকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির সহ-সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, পর্ষদ সদস্য কামরান টি রহমান, আবদুল হাই সরকার, ফজলুল হক, সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রমুখ।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোন দেশের ওপর কত হারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ হবে, সংবাদ সম্মেলনে তার একটি তালিকাও তুলে ধরেন। সেসময় বাংলাদেশের বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। সেই ঘোষণায় জানা যায়, বাংলাদেশের পণ্যেও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী করা যায়, তা নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সচেষ্ট হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ।
এদিকে সোমবার বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেছেন। গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রীর মতো বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথা বলেন।
চিঠিতে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা আগামী প্রান্তিকের মধ্যে আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে কাজ শেষ করব। এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক সভার জন্য দয়া করে প্রয়োজনীয় সময় দেবেন। তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করতে চাই যে বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করুন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের অনুরোধ রাখবেন।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এজেন্ডায় বাংলাদেশ পুরোপুরি সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। আমাদের প্রধান কর্মপন্থা হলো তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানি বৃদ্ধি করা। যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের আয় ও জীবনযাত্রায় ভূমিকা রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজারের প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করছি, যা পুরোপুরি শুল্কমুক্ত সুবিধা।’
এসআই/এমটিআই