গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এনআরবিসি
মানুষের নাগালের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। এজন্য স্বল্পখরচের প্রযুক্তিনির্ভর উপশাখা ব্যাংকিংয়ে জোর দিয়েছে এটি।
গ্রামীণ অর্থনীতি সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্বনির্ভরতা বাড়াতে বিশেষ মাইক্রোক্রেডিট (ক্ষুদ্র ঋণ) চালু করেছে এনআরবিসি ব্যাংক। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা ব্যাংকটি এখন বিভিন্ন সূচকে সবার শীর্ষে। প্রতিশ্রুতিশীল সেবা দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকটি গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। সেবা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের মাঝে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে উপশাখা ব্যাংকিং চালু করে এনআরবিসি।
সারাদেশে ৮৩ শাখার পাশাপাশি প্রায় ৪৩০টি উপশাখা খুলেছে ব্যাংকটি। দেশের সবগুলো ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপশাখা রয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের। ব্যাংকের শাখাবিহীন এলাকায় স্বল্পসুদে ঋণ দিতে মাইক্রোক্রেডিট চালু করেছে ব্যাংকটি। এজন্য পার্টনারশিপ ব্যাংকিংয়ের নতুন ধারণায় সেবা দেওয়া হচ্ছে। সহজ শর্তে ঋণের যোগান দিয়ে গ্রামের মানুষের কর্মের ব্যবস্থা করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার কাজ কড়ছে এনআরবিসি।
চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকটি দেশের পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়ে লেনদেন শুরু করে। ব্যাংকটির প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন দেখা যায় পুঁজিবাজারের লেনদেন সূচকে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার প্রতিনিয়ত রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারমূল্য ছিল ৩৭ টাকা ৩০ পয়সা।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, তাদের মূল লক্ষ্য গণমানুষের ব্যাংকে পরিণত হওয়া। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সবসময় সামনে থেকেছে ব্যাংকটি। মানুষের জীবন রক্ষায় বিতরণ করেছে ওষুধ, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিপিই, গ্লাভসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী। আর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় উদ্যোক্তা ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচল রেখেছে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। করোনাকালে সহজশর্তে দ্রুত ঋণ দিতে চালু করা হয় ইমার্জেন্সি লোন। এসব কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকটি ‘মানবিক ব্যাংক’র উপাধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রবাসী উদ্যোক্তাদের স্বপ্নের ব্যাংক এনআরবিসি। দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছি। মানুষের প্রয়োজন মেটাতে তাদের হাতের নাগালে চালু করেছি ৪৩০টি উপশাখা। এর বাইরে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস, বাংলাদেশ সড়ক যোগাযোগ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অফিস, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডেও বিল কালেকশন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এসব সেবাকেন্দ্রে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ব্যাংকে ৬ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য অভিনব ব্যাংকিং সেবা চালু করেছি। গ্রামের কুটির ও ক্ষুদ্রশিল্পকে অর্থায়ন করতে মাইক্রোক্রেডিট চালু করেছি। গ্রামীণ উদ্যোগগুলোকে সচল ও সুপ্রতিষ্ঠিত করে তাদের স্বনির্ভর করতে চাই। গ্রামেই তাদের কর্মের ব্যবস্থা হবে। কাজের জন্য শহরে ছুটতে হবে না। রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া এলাকায় মাইক্রোক্রেডিটের আওতায় মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পারভেজ তমাল বলেন, আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যাংকিং করছি। এজন্য সমসাময়িক সবার আগে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়ে লেনদেন শুরু করেছি। আমাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিফলন পুঁজিবাজারে ফুটে উঠেছে। আমাদের লক্ষ্য গণমানুষের ব্যাংকে পরিণত হওয়া। পিছিয়ে পড়া মানুষদের আশ্রয়স্থল ও ভরসার সেবা কেন্দ্রে পরিণত হতে চাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় ও সরকারের উন্নয়ন নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা ব্যাংকিং করছি। এজন্য সিএমএসএমই, কৃষি ঋণে জোর দিচ্ছি। স্বল্পসুদের ক্ষুদ্র ঋণ দিতে মাইক্রোক্রেটিড ও পার্টনারশিপ ব্যাংকিং চালু করেছি। এনআরবিসি ব্যাংক সম্পূর্ণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
ব্যাংকটির সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এনআরবিসি ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ও মোট সম্পদ (এনএভি) বেড়েছে। সমন্বিতভাবে ব্যাংকের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৪৪ পয়সায়। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চে যা ছিল ২৮ পয়সা। আলোচ্য সময়ে এককভাবে ইপিএস ২৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪১ পয়সা।
চলতি বছরের মার্চ শেষে সমন্বিত হিসেবে ব্যাংকটির ব্যালান্সশিটের আকার দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৫০ কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৯ টাকা, যা গত বছরের মার্চে ছিল ১২ হাজার ১৬ কোটি ৮৮ লাখ ১৪৪ টাকা। এছাড়া সমন্বিতভাবে চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকটির মোট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১১ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৭৭ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ৯৮৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ১৭২ টাকা। এককভাবে এনএভি হয়েছে ১ হাজার ১০৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার ৮২৯ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৯৭৯ কোটি ৭৫ লাখ ৪৩ হাজার ৭১০ টাকা।
এছাড়া সমন্বিতভাবে ২০২১ সালের মার্চে শেয়ার প্রতি এনএভি দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৮২ পয়সায়। গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ১৪ টাকা। আর এককভাবে শেয়ারপ্রতি এনএভি ১৫ টাকা ৭৪ পয়সা, গত ডিসেম্বরে যা ছিল ১৩ টাকা ৯৫ পয়সা।
করোনাকালের মধ্যে এনআরবিসি তার নেটওয়ার্ক বিস্তার এবং ব্যাংকিং সেবার প্রসার ঘটিয়েছে। এতে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরের মার্চে ব্যাংকের শাখা ছিল ৭৫টি, যা এ বছরের মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৮৩টি। উপশাখা ছিল ১৮২টি, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৩০টি। নতুন শাখাগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে ২ হাজার ৫০০ জনের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।
এসআই/আরএইচ