অগ্রণী ব্যাংক চেয়ারম্যান আবু নাসেরের পদত্যাগ দাবি

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক ও চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদকে স্বৈরাচারের দোসর উল্লেখ করে তার পদত্যাগ ও অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিজম ও বৈষম্য বিরোধী নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। ব্যানারের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক এবং ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনের অবসান ঘটে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে উদ্দেশ্যেই ব্যাংকগুলোতে আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে পরিচালনা পর্ষদ গঠন, পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং স্বৈরাচারের নিয়োগ করা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অপসারণ করে নতুনভাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ব্যাংক সেক্টরের নির্বাহী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ ব্যাংকের শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন।
বিজ্ঞাপন
আমরা জানতে পেরেছি, তিনি ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে অন্যায্যভাবে ও অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করছেন, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বিআরপিডি সার্কুলারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। তিনি ওই ব্যাংকে যোগদান করেই বৈষম্য বিরোধী চেতনা লালনকারী নির্বাহী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে বাধা প্রদান করছেন এবং পতিত সরকারের দোসরদের উৎসাহিত করছেন। তার আরও একটি অত্যন্ত বিতর্কিত পদক্ষেপ হলো অতি সম্প্রতি তিনি জুলাই, ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকারীদের আদর্শের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রক্ষার পক্ষে প্রকাশ্যে বিবৃতি প্রদান, যা জনগণের ন্যায্য আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি সব ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, হত্যা-গুম-খুনের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত। সর্বশেষ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের ফ্যান্ট ডাইন্ডিং রিসোর্টেও জুলাই ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত ছাত্র জনতাকে সু-পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। আর এই ৩২ নম্বর বাড়িটিকে কেন্দ্র করেই পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সব অপশাসন পরিচালিত হয়েছে। এই ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতি আপামর জনসাধারণের মনে সর্বোচ্চ ঘৃণা বিদ্যমান থাকাটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আন্দোলনের পুরোধা ছাত্র জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বাড়িটি গুড়িয়ে দেওয়া অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, আমরা অত্যন্ত বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ, তিনি তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড়িয়ে জুলাই ২৪-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের মহানায়কদের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু গত ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, খুন, গুম, ধর্ষণ ও আয়নাঘরের নৃশংসতার বিরুদ্ধে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। জুলাই-২৪ বিপ্লবে গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি কখনই মুখ খোলেননি। নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও শিশু হত্যার বিরুদ্ধে একটুও প্রতিবাদ জানাননি। শহীদদের প্রতি তিনি কখনোই সম্মান জানাননি, আহতদের জন্য কোনো সহানুভূতি প্রকাশ করেননি। আমরা মনে করি তিনি অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের নৈতিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙার প্রতিবাদে বিবৃতি প্রদান করে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করেছেন, যা বৈষম্যবিরোধী, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শের প্রতি এক নিকৃষ্টতম আঘাত।
সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদকে অপসারণ দাবির যৌক্তিকতা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন— ধানমন্ডি ৩২ ভাঙার প্রতিবাদ করে তিনি শহীদদের আত্মত্যাগককে অপমান এবং অস্বীকার করেছেন; তিনি তথাকথিত সুশীল সমাজের নামে (যেখানে ২৬ জনের সবাই পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারে দোসর হিসেবে চিহ্নিত) জুলাই ২৪ বিপ্লবের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং সার্বিকভাবে ২০২৪ এর মহান বিপ্লবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
সদস্য সচিব দাবি জানিয়ে বলেন, এই আওয়ামী দোসরকে চেয়ারম্যান পদ হতে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে; সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা এবং বিপ্লবের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শেখ আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু সোহেলসহ অগ্রণী ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএন/এসএম