চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত, কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি

দেশের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তাবস্থা যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে কমেছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। এ দুই মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঋণাত্বক অবস্থাও কমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক লেনদেনের ভারসাম্য সারণির যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে এমনটি প্রতীয়মান হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসিনা সরকার পতনের পর বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। একইসঙ্গে রপ্তানি আয় বাড়ছে। অন্যদিকে, শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আগের মতো না আনায় আমদানি ব্যয়ও খুব বাড়েনি। যার কারণে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কমে এসেছে বাণিজ্য ঘাটতিও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সে হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে।
প্রতিবেদন বলছে, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর। সুখবর হচ্ছে, ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর।
চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। কিন্তু এক মাস আগেও চলতি হিসাবে ঘাটতিতে ছিল। আর এর পরিমাণ ছিল ১৯ কেটি ১০ লাখ ডলার।
আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। হিসাব অনুযায়ী নভেম্বরের চেয়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ১১৭.২৭ শতাংশ কমেছে ডিসেম্বরে।
তথ্য বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২ হাজার ২৩২ কোটি ৪ লাখ ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ২০৮ কোটি ৮ লাখ ডলার। ফলে ৯৭৬ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এক মাস আগে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৯৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসে ১৮২ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। তবে আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১০৮৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বাড়লেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি ১০.২২ শতাংশ কমেছে।
এই সূচক আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ। পাশাপাশি এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তথ্যমতে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যেটা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। কারণ আগের বছরের একই সময়ে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১০ দশকি ৮০ বিলিয়ন ডলার।
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু গত মাসেও এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর গত বছর (২০২৩) ডিসেম্বর শেষে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতি ছিল ৩৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছর ঘাটতি নিয়ে শুরু হলেও এখন আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্ত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আর্থিক হিসাবে ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত। কিন্তু এম মাস আগেও অর্থাৎ নভেম্বর ৫৬ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল।
এসআই/এএমকে