কমেছে মাছের দাম, স্থিতিশীল গরু-মুরগি
সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে মাছের দাম। তাই রাজধানীর বাজারগুলোতে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের। তবে সেই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি, গরু-খাসিসহ অন্যান্য মাংস।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সপ্তাহ আগেও ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ ছিল না। কিন্তু আজকের বাজারে পাঙাশ-তেলাপিয়াসহ বেশি কিছু মাছের দাম মধ্য-নিন্মবিত্ত ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। তবে ক্রেতাদের দাবি, এই সময়ে মাছের দাম কম থাকার কথা থাকলেও বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে হুটহাট দাম বাড়িয়ে দেয়।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডা এলাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মাছের বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল সকাল মাছ কিনতে এসেছেন ক্রেতারা। তাদের মধ্যে কেউ কিনছেন পাঙাশ, কেউ কিনছেন তেলাপিয়া, আবার কেউ নিচ্ছেন ইলিশ। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী সবাইকে তাদের পছন্দের মাছ কিনতে দেখা গেছে। মাছের দাম কিছুটা কম হওয়ায় সন্তুষ্টি দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে।
আরও পড়ুন
আজকের বাজারে পাঙাশ ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহেও সর্বনিম্ন দাম ২০০ টাকার বেশি ছিল। এছাড়াও শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়, কিছুটা ছোট হলেই আবার দাম নেমে যাচ্ছে ৩০০ টাকার নিচেও। এছাড়াও পাবদা ৩৫০, কার্প ২২০-২৪০, সরপুঁটি ২০০, চিংড়ি ৮০০, মলা মাছ ৩৫০ টাকা এবং শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে।
এদিকে বাজারে গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল অবস্থা দেখা গেছে গরু-মুরগির মাংসের দামে। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। এছাড়াও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
বাজার করতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ১৮০ টাকা কেজি দরে পাঙাশ কিনেছি, যা গত সপ্তাহেও ২০০ টাকায় কিনেছি। দাম কমেছে বলা যাবে না, বরং এটাই স্বাভাবিক দাম। তবে হুটহাট করেই দেখি দাম বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এখনতো শীতের সময়, সে হিসাবে বাজারে পর্যাপ্ত মাছ ও দাম তুলনামূলক কমই থাকার কথা। নদী-নালা, খাল-বিল থেকে এই সময়ে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকায় অবশ্য সেই মাছগুলো আসে না। ঢাকায় আমরা কিনি সব চাষের মাছ।
আনিসুল হক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি, এটা একটু কমা দরকার। মাসখানেক আগেও ১৮০ টাকায় কিনেছি, এরপরই দাম বাড়তে শুরু করে। অথচ এই সময়ে কিন্তু খাদ্যের দামও বাড়তে শুনিনি। তারমানে দাম বাড়া-কমা নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের ওপর।
তিনি বলেন, এক সময় বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে। এখন হাত বদল হয়ে আসছে অন্য দলের হাতে। মাঝখানে আমাদের সাধারণ মানুষের কিছুই হলো না।
এদিকে দাম কম থাকায় ক্রেতাদের বাড়তি উপস্থিতি দেখে খুশি বিক্রেতারাও। মোহাম্মদ শওকত মিয়া নামে এক বিক্রেতা বলেন, এই সপ্তাহে মাছের বাজারে দাম কিছুটা নিম্নমুখী, তবে বেচাকেনা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দাম একটু কম থাকলে সবসময়ই বেচাকেনা ভালো থাকে। অনেক সময় সকালেই সব মাছ বিক্রি হয়ে যায়, আবার বাজার বাড়তি থাকলে বরফ দিয়ে পরদিনও বিক্রি করতে হয়।
মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিনে মুরগির চাহিদাটা একটু বেশিই থাকে। তবে মুরগির দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়ে গেছে। গত সপ্তাহেও ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি। এই সপ্তাহেও একই দাম। শীতের আগে দামটা ২০০ টাকার নিচে ছিল। সম্ভবত শীতের কারণে বেড়েছে। কারণ সাধারণত শীতে কিছু মুরগি মরে যায় এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যেকারণে খামারি পর্যায়েই বেশি দামে কিনে আনতে হয়।
গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, গরুর মাংস মোটামুটি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকার মধ্যেই আটকে আছে। গত এক দেড় বছর ধরে এই দামেই বিক্রি করছি।
টিআই/এমএ