হিরোসহ পরিবারের সদস্যদের ১৩৪ কোটি টাকা জরিমানা
শেয়ারবাজারে কারসাজির দায়ে বিতর্কিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের ওরফে হিরো এবং তার পরিবারের সদস্যদের ১৩৪ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
কারসাজির শিকার হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, চার কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে আবুল খায়ের হিরো ও তার সহযোগীদের জরিমানা করা হয়েছে। হিরো এবং তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ছাড়াও তার বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রীর ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসানকে জরিমানা করেছে বিএসইসি।
কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখ হতে ২৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে আবুল কালাম মাতবরকে ৭ কোটি ২০ লাখ, ডিআইটি কোপারেটিভ লিমিটেডকে ১৫ কোটি, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি, কনিকা আফরোজকে ১৯ কোটি, মো. আবুল খায়েরকে ১১ কোটি ও সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ হতে ২৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে সাজিদ মাদবরকে ১ কোটি ৬০ লাখ, মোহাম্মদ বাসার কে ১ কোটি ১৫ লাখ, মো. আবুল খায়েরকে ১৯ কোটি ১৫ লাখ, কনিকা আফরোজ কে ২ কোটি ৯০ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৯০ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ কোটি, ডিয়াইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডকে ৮৪ লাখ এবং আবুল কালাম মাদবর কে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অক্টোবর ২০২১ তারিখ হতে ২৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে মো. আবুল খায়েরকে ২ কোটি ৩০ লাখ, মো. আবুল কালাম মাতবরকে ৪ কোটি ১৫ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ, কোনিকা আফরোজকে ১ লাখ, ডিআইটি কোপারেটিভ লিমিটেডকে ১২ লাখ, আলেয়া বেগমকে ১ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ, মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ১ লাখ, সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
২৮ জুন ২০২১ তারিখ হতে ৫ আগস্ট ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে মো. আবুল খায়েরকে ১ লাখ, মো. আবুল কালাম মাতবরকে ১ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, কাজী ফরহাদ হাসানকে ৩৫ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন হিরু। প্যারামাউন্টের হাত ধরেই অন্যান্য ইনস্যুরেন্সের কারসাজিতে নামেন তিনি। পরে ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতেও জড়িয়ে পড়েন।
পরিবারের সদস্য ও অন্য সহযোগীদের নিয়ে কারসাজির বিশাল সিন্ডিকেট বা চক্র গড়ে তোলেন তিনি। এতে রয়েছে স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রীর ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান।
বাংলাদেশে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন হিরো। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও অল্প সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে সমালোচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হিরো ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি শেয়ার লেনদেনের বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়েছে।
এসএম