পণ্য রপ্তানি নিয়ে বিপাকে চারকোল খাতের ব্যবসায়ীরা
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ছোট ভাই জিল্লুর রহমান শিপনের সিন্ডিকেটে বিপদে পড়েছেন দেশের চারকোল ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ উঠেছে, তিনি চারকোল ব্যবসায়ীদের সংগঠন— বিসিসিএমইউএ কে দখলে নিয়ে সারাদেশে নিজস্ব লোকদের দিয়ে একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ীকে দিয়ে ক্রেতাদের মিসগাইড ও শিপিং লাইন নিয়ন্ত্রণ করে রপ্তানি খাতটি ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন।
জানা গেছে ফরিদপুর, মাগুরা ও মাদারীপুর এলাকায় বিভিন্ন চারকোল ফ্যাক্টরির মালিকরা সিন্ডিকেটে পাটকাঠির উচ্চ দামের ফলে এখনো উৎপাদনে যেতে পারেননি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এই খাতের রপ্তানি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
আরও পড়ুন
কারখানা মালিকদের অভিযোগ, একটি গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে রাখার কারণে এই সিজনে পাটকাঠি কিনতে হচ্ছে ৩৫০-৩৭০ টাকা দামে। অথচ পাটকাঠির সিজনে আমরা গতবারও কাঁচামাল কিনেছি ২০০-২২০ টাকা দরে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, এবার কোনোভাবেই বিদেশি ক্রেতা টেকানো সম্ভব হবে না।
তাদের অভিযোগ, মাঠে কাঁচামালের জোগান থাকার পরও পাটকাঠি ব্যাপারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সংগঠনের সভাপতি মির্জা শিপন ও তার নিজস্ব সিন্ডিকেট পুরো ফরিদপুর অঞ্চলের পাটকাঠি ব্যাপারীদের জিম্মি করেছেন। চারকোল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চীনের নির্দিষ্ট ক্রেতাকে সুবিধা দিতে এই সিন্ডিকেট মরিয়া হয়ে কাজ করছে।
চারকোল ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৭-৮মাস ধরে সংগঠনের সভাপতি তার পছন্দের ১০টি কোম্পানি দিয়ে চীনের একটি ক্রেতা গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি করেন। এতে দেশের বাকি ফ্যাক্টরি মালিক ও রপ্তানিকারকরা কোণঠাসা হয়েছেন।
চারকোল ব্যবসায়ী মাসউদ বলেন, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টি চারকোল ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো সময়। এই সময়েই আমরা বেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করি। কিন্তু সংগঠনের সভাপতি নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের কারণে আমরা ঠিক মতো রপ্তানি করতে পারছি না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার চারকোল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙলে তা ভবিষ্যতে ৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সংগঠন আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ী ছাড়া কাউকেই শিপিং লাইনে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। এমনকি আওয়ামী লীগপন্থি ব্যবসায়ীদের বাইরে অন্য কোনো ব্যবসায়ীকে পণ্য শিপিংয়ের ছাড়পত্রও দেওয়া হয় না। এতে পণ্য রপ্তানি নিয়ে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়া জিল্লুর রহমান শিপন ও তার সিন্ডিকেট একটি শিপিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এখন সেই শিপিং ছাড়া অন্য কোনো শিপিংয়ে রপ্তানিকারকরা পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না।
চারকোল মূলত কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধন পণ্য, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়
এছাড়াও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের কম দামে পণ্য রপ্তানি করতে বাধ্য করছেন তিনি। সংগঠন সভাপতি তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে একচেটিয়া ফ্যাক্টরি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুরের এক ফ্যাক্টরি মালিক বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে খুব বিপাকে আছি। আগে যারা আওয়ামী লীগ ছিলো রাতারাতি তারা খোলস পাল্টে বিএনপি নামধারী হয়ে পাটকাঠি থেকে শিপিং ও বায়ার সবই নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবে চললে চারকোল ব্যবসা টেকানো দায় হয়ে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ চারকোল উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিসিসিএমইএ) এর সভাপতি জিল্লুর রহমান শিপনের মোবাইলে ফোন করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ থেকে চারকোলের প্রধান আমদানিকারক দেশ চীন। এছাড়া তাইওয়ান, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানির সম্ভাব্য বাজার রয়েছে। চারকোল মূলত কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধন পণ্য, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আরএইচটি/এমএসএ