রয়্যাল এনফিল্ডের জন্য মধ্যরাত থেকে ক্রেতার লাইন, হুমড়ি খেয়ে বুকিং
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত হয়েছে আইকনিক ব্র্যান্ড রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল পেতে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়েছে প্রি-বুকিং। আর প্রি-বুকিং দিতে গতকাল রাত ৩টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ক্রেতারা। এখনও লাইনে আছেন শতশত মানুষ।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়্যাল এনফিল্ডের ফ্ল্যাগশিপ শোরুম ঘুরে দেখা যায়, শোরুমের ভেতর রয়েছেন শতাধিক ক্রেতা। বাইরে মানুষের লাইন রয়েছে ১০০ মিটার দূরে টিভিএস মোটরসাইকেলের শোরুম পর্যন্ত। সবার অপেক্ষা অতি কাঙ্ক্ষিত মোটরসাইকেল দেখা ও প্রি-বুকিং দেওয়া। শোরুমের ভেতরেও প্রি-বুকিং নিতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।
কে সামনে, কে পেছনে, সেটা নিয়েও হইচই হচ্ছে ক্রেতাদের মধ্যে। শোরুমের বাইরে ক্রেতা ছাড়াও সাধারণ মানুষদের একদণ্ড দাঁড়িয়ে শোরুমের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ ছবি বা সেলফিও তুলছেন।
শোরুমের একজন নিরাপত্তা কর্মী ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, আজ সকালের দিকে যারা প্রি-বুকিং দিয়েছেন তারা গতকাল রাত ৩টা ও এরপর থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সকালের দিকে প্রচুর মানুষের ভিড় ছিল ও এখনও আছে।
প্রি-বুকিং দেওয়া ক্রেতা মোহাম্মদ আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে এখানে এসেছি। তখনও আমার সামনে কয়েকশো মানুষ ছিল। আমি শোরুমে ঢুকতে পেরেছি দুপুর দেড়টার দিকে। তারপর প্রি-বুকিং দিতে পেরেছি। পছন্দের বাইক প্রি-বুকিং দিতে আমার এক বছরের অপেক্ষা শেষ হলো আজ।
আরেকজন ক্রেতা পাপ্পু খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল ৭টায় এসে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমি প্রি-বুকিং দিতে পেরেছি। সারা জীবন অন্য দেশে দেখা বাইক আমাদের দেশে দেখছি। গত বছর যখন সরকার অনুমতি দিয়েছে, তখন থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম কবে আসবে আমাদের দেশে। আজ ইচ্ছে পূরণ হলো। এখন শুধুমাত্র বাইক হাতে পাওয়ার অপেক্ষা।
এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ মোটরসাইকেল প্রি-বুকিং হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি বাংলাদেশে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইফাদ মোটরস লিমিটেডের কর্মকর্তারা। তাদের একজন ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, অনেকে অনলাইনে প্রি-বুকিং দিয়েছেন আবার যারা নগদ টাকায় প্রি-বুকিং দিতে চান তারা এখানে এসেছেন। ফলে এখন আমরা সবাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। এখনই এই হিসাবটা বলা যাচ্ছে না। প্রি-বুকিং মানি ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।
এর আগে ২১ অক্টোবর এই শোরুমে এক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের যাত্রা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের বাজারের জন্য ৩৫০ সিসির চারটি মডেলের মোটরসাইকেল লঞ্চ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— হান্টার, ক্লাসিক, বুলেট ও মিটিয়র।
ইফাদ মোটরস লিমিটেডের রয়্যাল এনফিল্ড বিভাগের হেড অব বিজনেস মমিনুর রহমান তানভীর জানান, বাজারে হান্টার মডেলের দাম শুরু হয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে; ক্লাসিক মডেলের দাম শুরু হয়েছে চার লাখ ৫ হাজার টাকা থেকে; বুলেট মডেলের দাম শুরু হয়েছে চার লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে এবং মিটিয়র মডেলের দাম শুরু হয়েছে চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে।
তিনি বলেন, এই চারটি মডেলে থাকবে উন্নত ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম এবং পরিমার্জিত সিঙ্গেল-সিলিন্ডার 'জে' (J) সিরিজের ইঞ্জিন। এছাড়া রং ও ব্রেকিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে আলাদা ভেরিয়েন্টও থাকবে। রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল কিনতে হলে প্রি-বুকিং বাধ্যতামূলক। ক্রেতারা এটি ওয়েবসাইট ও শোরুম থেকে প্রি-বুকিং করতে পারবেন।
আরও পড়ুন
একনজরে রয়্যাল এনফিল্ড
রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনের যাত্রা শুরু ১২৩ বছর আগে, ইংল্যান্ডে। মূলত সামরিক ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেলটির উৎপাদন শুরু হয়। এটি এখনো চালু থাকা বিশ্বের প্রাচীনতম টু-হুইলার ব্র্যান্ড।
১৯৫০-এর দশকে রয়্যাল এনফিল্ড ভারতের মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথভাবে এনফিল্ড ইন্ডিয়া গঠন করে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বুলেট ৩৫০ মোটরসাইকেল সংযোজন শুরু করে। পরের কয়েক দশকে রয়্যাল এনফিল্ড ভারতীয় মোটরসাইক্লিংয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে। যুক্তরাজ্যে ১৯৭০ সালে এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে রয়্যাল এনফিল্ড ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আইশার মোটরসের শতভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন। ৫০টিরও বেশি দেশে বিক্রি হয় রয়্যাল এনফিল্ড। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির বিক্রি রেকর্ড ৯ লাখ ইউনিট পেরিয়েছে।
২০২৩ সালে ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, কলাম্বিয়া ও আর্জেন্টিনার পর নেপালে পঞ্চম সংযোজন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে রয়্যাল এনফিল্ড।
জানা গেছে, রয়্যাল এনফিল্ড উৎপাদনের জন্য কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি সর্বাধুনিক উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে ইফাদ মটরস লিমিটেড। এটি স্থানীয়ভাবে বিশ্বমানের মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে সক্ষম।
দীর্ঘ দুই দশক ইঞ্জিন সক্ষমতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখার পর ২০২৩ সালে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ৩৭৫ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন সক্ষমতার মোটরসাইকেলের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার।
এমএইচএন/এমজে