পাঙাস-তেলাপিয়াতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, ইলিশ তো দূরের কথা
বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম ওঠা-নামা করলেও ব্যতিক্রম মাছের ক্ষেত্রে। এই বাজার দীর্ঘ দিন থেকে চড়াই রয়ে গেছে। বাজারে মাছের দাম কমার যেন কোনো নামই নেই। মূলত ‘বাজার চড়া’ এই গতানুগতিক বুলি থেকে বের হতে পারছে না মাছের বাজার।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে আগের মতোই মাছের দাম বাড়তি দেখা গেছে। বাড়তি দামের বিষয়ে বিক্রেতারা দিয়েছেন নানা অজুহাত। আর মাছের এমন বাড়তি দামে হতাশ হয়ে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, চাষের কই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায়, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, গলসা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, টেংরা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, চাপিলা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি রপ্তানি চক্করে সমালোচনায় থাকা ইলিশ মাছও অতিরিক্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাজারে সব ধরনের মাছের দামই বাড়তি যাচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালীর বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবিব বলেন, বাজারে এমন কোনো মাছ নেই যেটার দাম বাড়তি নয়। কোনো মাছই কেনা যায় না অতিরিক্ত দামের কারণে। ইলিশ মাছ তো কেনা দূরের কথা, বর্তমানে পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কই মাছ কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে মাছের দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো লক্ষণ কখনো দেখা যায় না। প্রতিদিন বাজারে আসলে মাছের দাম শুনে হতাশ হতে হয় আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের।
রাজধানীর মালিবাগের মাছের বাজারের ক্রেতা শহিদুল ইসলামও মাছের দাম শুনে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি প্রবাদটি আর ঠিক নেই। এখন বাজারে কোনো মাছ নেই যার দাম কিছুটা কম। সব মাছের দামই বাড়তি, আর এটা দীর্ঘ দিন ধরে বাড়তিই রয়ে গেছে। এক কেজি ওজনের একটা ইলিশের দাম চায় ১৬০০ টাকা। যে কারণে শুধু দাম শুনেই চলে আসতে হয়। অথচ এটা রপ্তানি করার জন্য সমালোচনার শেষ নেই। আমরা সাধারণ মানুষ এই মাছ কিনে খেতে পারছি না। বাজারে পাঙাস, তেলাপিয়া, কই, রুই এই মাছগুলোরও বাড়তি দাম হলেও অন্য মাছের তুলনায় একটু কম হওয়ায় এগুলোই আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের কিনতে হয় সবসময়। যেকোনো ভালো মাছ অতিরিক্ত দামের কারণে আমরা কিনতে পারি না।
মাছের বেশি দামের বিষয়ে উত্তর বাড্ডা বাজারের বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, মাছের দাম বাড়তি এটা নতুন কিছু না। দুই বছর আগে যখন মাছের খাবারের দাম বেড়েছে, তখন থেকেই দাম বাড়তি যাচ্ছে। আসলে আমাদের পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে মাছ কিনে আনতে হয়। আমাদের কেনা দাম বেশি, তাই খুচরা বাজারে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। পাঙাস, তেলাপিয়া, কই, রুই, কাতলার দাম মোটামুটি একই রকম থাকলেও অন্যান্য মাছের দাম কমে-বাড়ে করে। আগে যেখানে একজন ক্রেতা দুই কেজি মাছ কিনেছে, এখন দাম বাড়তির কারণে তারা এক কেজি মাছ কেনে। আবার অনেকে তার চেয়েও কম কেনে। ফলে আমাদের ব্যবসাও খারাপ যাচ্ছে।
এএসএস/কেএ