চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলু রফতানিতে রেকর্ড
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি ফসল আলু। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি পণ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এ ফসলটি। করোনা অতিমারির সময়ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে বেড়েছে আলু রফতানি। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টন আলু রফতানি করা হয়। তবে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৯৩১ টন আলু রফতানি করা হয়েছে। এ অর্থবছর শেষ হতে এখনও বাকি দেড় মাস। এ সময়ে আলু রফতানি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট আলু রফতানির ৯৫ ভাগ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি টন আলু গড় ২৫০ ডলার মূল্যে রফতানি হচ্ছে। সেই হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে আলু রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ১২.৭২ মিলিয়ন ডলার।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত আলু রফতানি হয়েছে ৫০ হাজার ৯৩১ টন। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯ হাজার ১৫৩ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২ হাজার ১১৫ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে আলু রফতানি হয়েছিল ৩১ হাজার ৪০২ টন। অর্থাৎ গত চার বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি আলু রফতানি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. নাছির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রফতানিযোগ্য আলু শতভাগ কীটনাশক ও পোকামাকড়মুক্ত নিশ্চিত হওয়ার পরই উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সনদ দেওয়া হয়।
অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি আলু রফতানি করা হয়েছে। গত বছর করোনার কারণে রফতানি কম হয়েছিল। এবার করোনা সংক্রমণ থাকলেও আলু রফতানিতে ভাটা পড়েনি। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে অন্য সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও সমুদ্রপথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে আমাদের দফতরের সব কার্যক্রম সচল ছিল। এ অর্থবছরের বাকি সময়ে আলু রফতানির পরিমাণ আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন : মালয়েশিয়ায় বিএডিসির ১১১ টন আলু রফতানি
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, সৌদি-আরব, কাতার, বাহরাইন, ভিয়েতনাম ও ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের আলু রফতানি হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে মালয়েশিয়ায়। দেশটিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ২৯ হাজার ৪০৫ দশমিক ৬৩৪ টন আলু। এছাড়া সিঙ্গাপুরে ২ হাজার ৫৯৭ দশমিক ৯৫৫ টন, শ্রীলঙ্কায় ১৪ হাজার ৯৫১ দশমিক ২৬৫ টন আলু রফতানি হয়েছে। আরব-আমিরাতে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৭২৯ দশমিক ৮৭৬ টন, মালদ্বীপে ১৩৫ টন, সৌদি আরব ১ হাজার ১০০ দশমিক ৫০০ টন, কাতারে ২৫৭ দশমিক ৫০০ টন, বাহরাইনে ২৯৬ দশমিক ২৪০ টন, ভিয়েতনামে ২৭ টন, ব্রুনাইয়ে ৪৩০ দশমিক ২৪০ টন আলু রফতানি করা হয়।
আলু রফতানিকারক হাফিজুর রহমান মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত আলুর চাহিদা ব্যাপক। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ছোট লাল আলুর চাহিদা বেশি। এছাড়াও ডায়মন্ড ও মানিলাসহ কয়েক প্রজাতির আলু রফতানি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আলু রফতানি করতে গিয়ে কনটেইনার সমস্যায় পড়তে হয়ে। সময়মতো কনটেইনার পাওয়া যায় না। এছাড়া অনেক শিপিং লাইন ও জাহাজ আলু পরিবহন করতে চায় না। আলু পরিবহন করতে প্রত্যেক জাহাজকে বাধ্য করা উচিত। এজন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন : আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন টঙ্গিবাড়ীর চাষিরা
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, রাশিয়াতে আগে আলু রফতানি হলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। সেখানে পাঠাতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যেত। দেশটিতে আলু পাঠাতে উদ্ভিদের যে পরীক্ষা তারা চায় বাংলাদেশে বর্তমান টেকনোলজিতে তা সম্ভব নয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর আলুর চাহিদা ৭০ লাখ টন। এর বিপরীতে ১ কোটি টনের বেশি আলু দেশে উৎপাদন হয়।
কেএম/এসকেডি