‘ভয়ে’ তড়িঘড়ি করে চেয়ারম্যান পরিবর্তন করল মার্কেন্টাইল ব্যাংক
পর্ষদ বাঁচাতে চেয়ারম্যান পরিবর্তন করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। উদ্যোক্তা পরিচালক মো. আনোয়ারুল হককে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন বর্তমান পর্ষদ। এর আগে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোরশেদ আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
রোববার ( ১ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৪৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে মো. আনোয়ারুল হক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি আনোয়ারুল হক লিভিং প্লাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরেও তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি গুলশান ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব এবং উত্তরা মডেল ক্লাব লিমিটেডের সদস্য।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল। দীর্ঘদিন তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পর অনেক ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিলেও এই ব্যাংকটির পরিচালনায় তেমন পরিবর্তন আসেনি। তবে ব্যাংকটির ভেতরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে অস্থিরতা চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্ষদে হস্তক্ষেপ করতে পারে এমন ভয় ছিল পরিচালকদের মধ্যে। তাই তড়িঘড়ি করে আগের চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছে।
২০১৩ সালে আবদুল জলিল মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা যে পরিমাণ ব্যাংকটির শেয়ার ধারণ করেন তা একক ভাবে ২ শতাংশের কম। ফলে পরিচালনা পর্ষদে জলিল পরিবার কর্তৃত্ব হারায়। ব্যাংক খাতের নানা অনিয়ম, পরিচালনা পর্ষদের একক আধিপত্য বিস্তার করে ঋণ বিতরণ, বিশৃঙ্খলা থেকে ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে পর্ষদগুলো পুনর্গঠনও করে দিয়েছে। এই আতঙ্কে মার্কেন্টাইল ব্যাংকেও বিরাজ করেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোরশেদ আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। এরপর থেকে আত্মগোপনে গিয়ে গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আব্দুর রউফ তালুকদার। নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেন ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি এসে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন শুরু করেন। বিশেষ করে ব্যাংক দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে সাতটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিয়েছে। এগুলো হলো – ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউসিবি এবং এক্সিম ব্যাংক । এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংক নিজেদের মতো করে পর্ষদ পুনর্গঠন করে নিয়েছে। এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে যেসব ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের তথ্য রয়েছে পর্যায়ক্রমে সেসব ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসআই/এসকেডি