সাবেক মন্ত্রী তাজুলের অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে চায় বিএফআইইউ
সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী-সন্তানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে পরিচালিত হিসাব ও অন্যান্য তথ্যও পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিএফআইইউয়ের পক্ষ থেকে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিএফআইইউয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিআইএফইউয়ের নির্দেশনায় তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী-সন্তনের ব্যক্তিগত বা যৌথ নামে কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে পরিচালিত হিসাব, লকার ও সঞ্চয়পত্রের তথ্য, যেমন হিসাব খোলার ফরম, গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য বা কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদির সফট কপি এবং তাদের জামানত ও ঋণ পরিশোধের তথ্যসহ ঋণ হিসাবসংক্রান্ত তথ্য পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বিআইএফইউয়ের নির্দেশনায় তাজুল ইসলামের নাম, পিতা ও মাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে টানা দুইবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী হন তাজুল ইসলাম। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ১০ বছর আগে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি টাকার কিছু বেশি। তা গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ১১৮ কোটি ছাড়িয়ে যায়। শুধু বন্ডেই তার বিনিয়োগ ৮০ কোটি টাকা। হলফনামায় তিনি স্ত্রী ও তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় কিংবা সম্পদের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। মন্ত্রী এখন বছরে আয় করেন চার কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তার আয় চার কোটি টাকার কিছু বেশি ছিল।
তাজুল ইসলাম কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং টানা দুইবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর আগে, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। মন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৮ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চার বছরের ব্যবধানে সেই সম্পদ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
তাজুল ইসলাম ১৯৫৫ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের পোমগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জুলফিকার আলী এবং মা আনোয়ারা বেগম দম্পতির তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়।
তাজুল ইসলাম পোমগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করে পোমগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল অব স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তাজুল ইসলাম ফেবিয়ান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি যমুনা ব্যাংকসহ দুইটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার প্রকাশক তিনি।
এসআই/কেএ