ভেঙে দেওয়া হলো এসআইবিএলের পর্ষদ, নতুন বোর্ড গঠন
এবার এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে একজন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারসহ পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের নতুন বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক এক আদেশে পর্ষদ বাতিল করা হয়। একই আদেশে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো আদেশে বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
এসআইবিএলের নতুন পর্ষদে পরিচালক হয়েছেন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মেজর (অব.) মো. রেজাউল হক, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আনোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ২০১৭ সালে ব্যাংক দুটি দখল করে এস আলম গ্রুপ। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কমার্স ও এনবিএলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় গ্রুপটির হাতে। এসব ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে গ্রুপটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে ব্যাংকটি দেখিয়েছে মাত্র ১৬৪৪ কোটি টাকা।
একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির পরিদর্শন টিম ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ পেয়েছে ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি দেখিয়েছে মাত্র ৬৪ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৮ হাজার ৬৩ কোটি টাকা গোপন করেছে।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। সরকার পরিবর্তনের পর এস আলম ঘনিষ্ঠরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৬ ব্যাংকের ঋণ বিতরণে গত ১৯ আগস্ট বিধিনিষেধ আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংক কৃষি, চলতি মূলধন, সিএমএসএমই, প্রণোদনা প্যাকেজ এবং নিজ ব্যাংকে রক্ষিত এফডিআরের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা দিতে পারবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বা সীমাতিরিক্ত বকেয়া স্থিতির নগদ আদায় ছাড়া বিদ্যমান বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া যাবে না।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা।
এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের বেশিরভাগ শেয়ার এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ব্যাংকটির পর্ষদ গঠিত হয়েছে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সমন্বয়ে। আর ন্যাশনাল ব্যাংকে পুরোনো পরিচালকদের মধ্য থেকে বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে পর্ষদ গঠিত হয়।
জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পর্ষদও পর্যায়ক্রমে ভেঙে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদও ভেঙে দেওয়া হবে। তবে এ নিয়ে তড়িঘড়ি করা হবে না।
এসআই/এসএসএইচ