বাড়ল সোনার অলংকারের মজুরি, বিক্রি কমার আশঙ্কা
সোনার অলংকার বিক্রিতে ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন(বাজুস)। এর ফলে এখন কেউ এক লাখ টাকার সোনার অলংকার কিনতে গেলে মজুরি বাবদ ক্রেতাকে ন্যূনতম ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। এতদিন ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের ভিত্তিতে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা মজুরি বাবদ নেওয়া হতো।
সোনার বাড়তি দামের বাজারে এমনিতেই অলংকার কেনা আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে গেছে, এর মধ্যে মজুরি বাড়ায় বিক্রি আরো কমে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে বাজুসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এতদিন মজুরির বিষয়ে কোনো নিয়মকানুন ছিল না। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করতো। এখন নিয়মের মধ্যে আনতে ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া এখন সোনার অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনে এবং সাধারণ ক্রেতা সোনা বিক্রি করতে গেলে আগের চেয়ে মূল্য হার কম পাবেন। নতুন নিয়মানুযায়ী সোনার অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ও পারচেজ বা ক্রেতার নিকট থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বাদ যাবে। এতদিন সোনার অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ ও পারচেজে ১৩ শতাংশ বাদের নিয়ম ছিল।
নতুন নিয়মে কোনো গ্রাহক এক লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার পরিবর্তন করতে গেলে তাকে ১০ হাজার টাকা বাড়তি দিতে হবে। এতদিন ৯ হাজার টাকা দিতে হতো। একই সঙ্গে কোনো গ্রাহক বা ক্রেতা এক লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার বিক্রি করতে যায় সে নগদ পাবে ৮৫ হাজার টাকা; আগে পেত ৮৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ এখন স্বর্ণালংকার বিক্রি করতে গেলে মূল্য বেশি কর্তন করা হবে।
আরও পড়ুন
স্বর্ণালংকারের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাজুসের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট রাশেদ রহমান অমিত ঢাকা পোস্টকে জানান, আগে নির্ধারিত কোনো মজুরি ছিল না। জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে যার ইচ্ছেমতো মজুরি নিত। কোনো নিয়মনীতি ছিল না। তাই এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমিন জুয়েলার্সের এক জ্যেষ্ঠ বিক্রয়কর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে এক লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকারের মজুরি নেওয়া হত দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। এখন নিতে হবে ছয় হাজার টাকা। এর মানে তিন হাজার টাকা বেশি গুণতে হবে। এর সঙ্গে ছয় শতাংশ ভ্যাট অর্থাৎ ছয় হাজার টাকা দিতে হবে সরকারকে। আগে দিতে হতো পাঁচ শতাংশ (৫ হাজার টাকা)। তার মানে এখন লাখে চার থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি গুণতে হবে।
তিনি বলেন, এখন সোনার দাম অনেক বেশি। ফলে অর্থনৈতিক নানা সমস্যা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে বিয়ে কিংবা অনুষ্ঠানের খুব প্রয়োজন ছাড়া এখন আর কেউ সোনা কেনেন না। গত ছয় মাস ধরে স্বর্ণালংকারের ক্রেতা একেবারে কমে গেছে। আগের তুলনায় এখন অর্ধেকও বেচাকেনা নেই। নতুন নিয়মে বিক্রি আরো কমে যাবে বলে শঙ্কার কথা জানান এ বিক্রয়কর্মী।
বাজুস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোনার অলংকার বিক্রয়ের সময় ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সোনার অলংকার বিক্রয়ের সময় ভারতে ১২ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৮ শতাংশ, চীনে ১৫ শতাংশ, ইতালিতে ২০ শতাংশ, হংকং এ ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৩৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ২০ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত মজুরি নেওয়া হয়।
এখন থেকে দেশের সব জুয়েলারিতে সোনার অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং পারচেজ বা ক্রেতার নিকট থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বাদের নিয়ম কার্যকর এবং সোনার অলংকার বিক্রয়ের সময় ক্রেতার নিকট থেকে ৬ শতাংশ মজুরি নেবে বলে জানায় বাজুস।
বাজুসের সব শেষ নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম এক লাখ ১৭ হাজার ২৮২ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ১১ হাজার ৯৫১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৯৫ হাজার ৯৬০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ৭৯ হাজার ৩৩৯ টাকা। এছাড়া ক্যাটাগরি অনুযায়ী বর্তমানে ২২ ক্যারেটে প্রতি ভরি রুপার দাম দুই হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম দুই হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম এক হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম এক হাজার ২৮৩ টাকা।
এসআই/এমজে