ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের পদত্যাগ
কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হয়ে নিজেরাই সবল হতে চায় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোর করে তাদের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে চায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বেশিরভাগ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগের বিষয়টি স্বীকার করে ড. সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার জানান, গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন। কেন পদত্যাগ করেছেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো বলতে পারবে, এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না।
আরও পড়ুন
না প্রকাশ না করার শর্তে পদত্যাগ করা এক পরিচালক ঢাকা পোস্টকে জানান, ব্যাংকের পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে এখন একীভূত না হয়ে আমরা নিজেরাই সবল হব। দেশের বড় বড় গ্রুপ বসুন্ধরা, নাসা, এস আলমসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাদের দেওয়া ঋণ আদায় হলে ও খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পারলে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এমন পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি পছন্দ করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সুযোগ না দিয়ে খেলাপিদের টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পর্ষদকে না জানিয়ে নিজেরাই ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কারণে চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বেশিরভাগ পরিচালক গত বৃহস্পতিবার (২ মে) পদত্যাগ করেছেন।
এদিকে পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ বেশিরভাগ পরিচালক পদত্যাগ করায় ব্যাংকটি অচল হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে রোববার (৫ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছে। পর্ষদে বেশ কয়েকজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রোববার নতুন গঠন করা পর্ষদে ১০ সদস্যের মধ্যে আগের তিন পরিচালককে রাখা হয়েছে। তারা হলেন– উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমান, ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ও সিকদার ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে মনোনীত পরিচালক সফিকুর রহমান।
নতুন করে পর্ষদে আনা হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক কমিশনার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট রত্না দত্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জহুরুল হুদাকে।
প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে নতুন করে আনা হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ, আইনজীবী এহসানুল করিম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একে এম তফাজ্জল হক।
পরিচালকদের পদত্যাগ ও নতুন পর্ষদ গঠন নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক কোনো মন্তব্য করেননি।
বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিয়ে সিকদার পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে পারভীন হক সিকদার আছেন একদিকে, অন্যদিকে তার দুই ভাই রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার। ভার্চুয়াল এজিএমে পাতানো ভোটের মাধ্যমে তাকে পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে– এমন শঙ্কায় পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নির্ধারিত বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ওপর স্থিতাবস্থা দেন আদালত। এর আগে একই শঙ্কা জানিয়ে এজিএম বন্ধের উদ্যোগ নিতে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি লেখেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠনের আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ড. সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার। এছাড়া পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন, খলিলুর রহমান, পারভিন হক সিকদার, শফিকুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু সাড়ে চার মাস যেতে না যেতেই স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করল ব্যাংকটির পরিচালকরা।
ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। তাদের মেয়ে পারভীন হক সিকদার, ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। ৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সিকদার ইন্সুরেন্সের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সফিকুর রহমান। সবমিলিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এসআই/এসএসএইচ