‘৬২ বছর বয়সে এসে আমার আসল জন্মতারিখ জানতে পেরেছি’

আমি শুধু জানতাম কোন বছরে আমার জন্ম হয়েছিল। সে বছর নাকি বঙ্গোপসাগরে ভয়াবহ ঝড় উঠেছিল। মা বলতেন, ঐ বছর লবণের দামও ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু ঠিক কোন তারিখটাতে আমার জন্ম হয়েছিল সেটা জানা ছিল না জানালেন মিরপুরের বাসিন্দা আলিমুদ্দিন মিয়া।
একটি ছোট খাবারের দোকানের মালিক আলিমুদ্দিন মিয়া জন্মগ্রহণ করেছিলেন বরিশালের একটি কৃষক পরিবারে। তার বাবা-মা কখনো জন্মতারিখ নথিভুক্ত করার কথা চিন্তা করেননি, কিন্তু তার মা তার জন্মের সেই রাতের কথা কিছুটা মনে রেখেছেন। তার চাচা তার কানে কলেমা পাঠ করেছিলেন এবং আজান দিয়েছিলেন। আলিমুদ্দিন মিয়ার জন্মতারিখ কেউ না লিখে রাখলেও তার ছেলে-মেয়েদের জন্মতারিখ তিনি ঠিকই নিবন্ধন করেছেন। প্রতি বছর ঘটা করে পালন করেন সন্তানদের জন্মদিন; তবে জন্ম তারিখ জানা না থাকায় কখনো নিজের জন্মদিন পালনের আনন্দ তিনি পাননি।
আলিমুদ্দিন মিয়ার মতো, অনেক বয়স্ক বাংলাদেশির ক্ষেত্রেই জন্মদিন না জানাটা একটি সাধারণ ব্যাপার। তারা প্রায়শই একটি নির্ধারিত জন্মতারিখ নিয়ে জীবন পার করে দেন, তারমধ্যে বেশিরভাগই জানুয়ারির ১ তারিখ। জন্মতারিখ না জানা মানুষের এই সংখ্যাটি কিন্তু প্রায় ২০ মিলিয়নের কাছাকাছি! এই মানুষগুলোর সত্যিকারের জন্মদিন যদি খুঁজে বের করা যায়, সেটিই হবে তাদের জন্য জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপহার! এই প্রত্যাশা থেকেই বাংলাদেশের জনপ্রিয় বেকারি চেইন টেস্টি ট্রিট নিয়েছে অজানা জন্মদিন খুঁজে বের করার অভিনব এক উদ্যোগ।
টেস্টি ট্রিটের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে কাস্টমড্ এআই মডিউল ‘বেস্ট বার্থডে গিফট’ যা জন্মতারিখ না জানা মানুষকে খুঁজে দেবে তাদের জন্মদিন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল একটি ডাটাবেজ যেখানে জন্মের কাছাকাছি সময়কার কোনো গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা ইত্যাদি ইনপুট দেওয়া হলে, তার ভিত্তিতে এআই মডিউলটি সঠিক অ্যালগরিদম ব্যবহার করে জন্মের সাল, মাস ও তারিখ বের করে ফেলতে সক্ষম। এভাবে যে কেউ টেস্টি ট্রিটের আউটলেটে এসে সহজেই জেনে নিতে পারবেন নিজের বা প্রিয়জনের অজানা জন্মতারিখ; প্রত্যেকের জন্যই নিশ্চিত হবে জন্মদিন পালনের আনন্দ।
ফেসবুকে টেস্টি ট্রিটের এই ক্যাম্পেইনটির বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে আলিমুদ্দিন মিয়ার মেয়ে সালমার। তিনি আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে তার বাবার জন্মের সময়ের ঘটনা সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে চলে আসেন টেস্টি ট্রিট-এর মিরপুর শাখায়। প্রথমদিকে আলিমুদ্দিন মিয়া একটু সন্দিহান থাকলেও তার মেয়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং এআই মডিউলের সাহায্যে তিনি এখন তার সঠিক জন্ম তারিখ জানেন এবং পালন করতে পারেন নিজের জন্মদিন!
আলিমুদ্দিন মিয়া জানালেন, ‘প্রথম যখন জন্মতারিখটা জানতে পারলাম, কী যে এক অসাধারণ মুহূর্ত ছিল সেটা! আমার মেয়ে এবং টেস্টি ট্রিট, দুজনকেই ধন্যবাদ।’
টেস্টি ট্রিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান কামালের কাছে আমরা জানতে চাইলাম, মানুষের আসল জন্মদিন খুঁজে বের করতে তারা কেন আগ্রহী? কামরুজ্জামান কামাল বললেন, ‘টেস্টি ট্রিট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেকারি; দেশজুড়ে আমাদের ৩৬০টি আউটলেট ছড়িয়ে আছে। মানুষের জন্মদিন উদযাপনের জন্য আমরা কেক বিক্রি করি এবং এটি সবসময়ই আমাদের জন্য আনন্দের একটি ব্যাপার। কিন্তু কারও জন্মদিনে উপহার হিসেবে তার আসল জন্মতারিখ খুঁজে দেওয়াটার চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে বলেন? এই এআই মডিউলটি আসলে টেস্টি ট্রিটের পক্ষ থেকে জন্মতারিখ না জানা মানুষদের জন্য জন্মদিনের একটা উপহার!
এমএ