ঈদ উপলক্ষ্যে জুতায় ডিসকাউন্টের ছড়াছড়ি, নেই প্রত্যাশিত ক্রেতা
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে নতুন জামা-কাপড়। আর পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতা অনেকটা অপরিহার্য। সামর্থ্য থাকলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা কিনতে পছন্দ করেন সবাই। তাই গ্রাহকের চাহিদা ও আশা–আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় রেখে রমজানে বাড়তি অফার দিচ্ছে জুতার বিভিন্ন ব্র্যান্ড। অনলাইন-অফলাইনে কিনলেই পাচ্ছেন বিশেষ ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ও গিফট ভাউচার।
তবে এত ডিসকাউন্টের ছড়াছড়ির পরও প্রত্যাশিত ক্রেতা পাচ্ছেন না বলে হতাশা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের আশা, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থাৎ ঈদের আগে কাঙ্ক্ষিত বিক্রয় হবে। বাড়বে ক্রেতা সমাগম, জমজমাট হবে বেচাবিক্রি।
রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকার ভাইব্রেন্ট, বাটা, এপেক্স, বোলিং, বে-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতার দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জনা যায়।
পাদুকা শিল্পে দেশের সবচেয়ে বড় বহুজাতিক কোম্পানি বাটা। সারাদেশে ২৪২টি শোরুম রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে বাটায় চলছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার। অনলাইনে ক্রয়ে করে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ ও এবি ব্যাংকের কার্ড থেকে পেমেন্ট করলে ১০-১৫ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে এবং এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি, প্রিমিয়ার, ইউসিবি ও কমিউনিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ক্রয়ে ক্রেতারা পাচ্ছেন ১০ থেকে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট অফার। এছাড়া গিফট ভাউচার ক্রয়ের মাধ্যমে কেনাকাটায় সব পণ্যে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা পাচ্ছে ক্রেতারা। অন্যদিকে অনলাইন কেনাকাটায় সব পণ্যে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা। ঈদকে সামনে রেখে শত শত নতুন ডিজাইনের জুতা বাজারে এনেছে বাটা। এতোকিছুর পরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা।
বাটার এক শোরুমের বিক্রেতা হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কে আমাদের সবচেয়ে বড় দুটি শো-রুম আছে। ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিটি শোরুমে দৈনিক ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকে। ঈদের আমেজে বিক্রি বাড়ে এটা সত্যি, তবে আমাদের প্রত্যাশা ও লক্ষ্যমাত্রা থাকে। সেটা মোটামুটি পূরণ হচ্ছে। আশা করছি চলতি সপ্তাহে বিক্রি আরও বাড়বে।
অন্যদিকে কেনাকাটায় ফুটওয়্যার কোম্পানি এপেক্স দিচ্ছে তিন ধরনের অফার। প্রথমত নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট, দ্বিতীয়ত ১৩ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ন্যূনতম ১৭০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ কেনাকাটায় পাচ্ছেন সিঙ্গার টিভি, ঢাকা-কক্সবাজার বিমান টিকিট, বার্জার ও মোশন ভিউ থেকে নানা উপহার এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা। সব ধরনের পণ্য ক্রয়ে নগদ, বিকাশ, ইউসিবিএল, ঢাকা ব্যাংক, যমুনা, এবি, প্রাইম, ডাচ বাংলা, কমিউনিটি ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ওই সুবিধা পাওয়া যাবে।
বিক্রির সার্বিক বিষয়ে জানতে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ডিএমডি ও সিএফও দিলীপ কাজরি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারাদেশে আমাদের ২৬০টি শোরুম রয়েছে। এছাড়া ডিলারসহ অন্যান্য মাধ্যমেও আমাদের পণ্য বিক্রি করছি। ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদের নতুন ডিজাইনে জোর দেওয়া হয়েছে। বিক্রির বিষয় বলতে গেলে গত বছরের তুলনায় ভালো বলা যায়। তবে উচ্চমানের জুতার বিক্রির তুলনামূলক কম। মধ্যম মানের পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে। হয়তো অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট এখানে বড় বিষয় হতে পারে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি অর্জন করতে পারবে। তবে সিগনেফিকেন্ট গ্রোথ হচ্ছে না সেটা বলতে পারি। ক্রেতাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের বিভিন্ন অফার চলমান রয়েছে।
ইউএস-বাংলা ফুটওয়্যারের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ভাইব্রেন্ট ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম। ভাইব্রেন্ট গ্রাহকদের চাহিদা, আধুনিকতা ও সব শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে ৫০০’র বেশি মডেলের জুতার কালেকশন রাখছে শোরুমগুলোতে। নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য জুতা-স্যান্ডেলের পাশাপাশি বিভিন্ন ডিজাইনের লেদার সামগ্রী, ট্রাভেল ব্যাগ, পুরুষদের পাঞ্জাবী, শার্ট, টি-শার্টসহ অন্যান্য লাইফ স্টাইল সামগ্রীও পাওয়া যাচ্ছে ভাইব্রেন্ট ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে।
সারাদেশে ভাইব্রেন্টের ২৫টি শাখা রয়েছে। রামপুরা হাজিপাড়ার ভাইব্রেন্টের শো-রুম ইনচার্জ দীপু হোসেন। ঈদের বিক্রি নিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা দিচ্ছি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট সুবিধা। ক্রেতার ভিড় সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। এই শোরুমে ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রির যে টার্গেট পুরোপুরি পূরণ হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় বিক্রি কিছুটা ভালো বলা যায়।
এবারের ঈদের চাহিদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদে সাধারণত বাচ্চাদের আইটেম বেশি চলছে। এরপরে নারীদের জুতা-স্যান্ডেল। পাশাপাশি আমাদের পোশাকের আইটেমগুলোও ভালো চলছে। একই বক্তব্য পাওয়া গেল জুতা-স্যান্ডেলের ব্র্যান্ড বে ও বোলিংয়ের বিক্রেতাদের কাছ থেকেও।
দোকানগুলো সূত্রে জানা যায়, ভাইব্রেন্টের অফারের মধ্যে রয়েছে লংকা বাংলা, প্রাইম, ইউসিবি, এনআরবি ব্যাংক, কমিউনিটি, স্টান্ডার্ড চাটার্ট, পূবালী, ডাচ বাংলা ও সিটি ব্যাংকের কার্ডে ১০ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ও নগদে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা। এছাড়া পণ্য কিনলেই যমুনা ও এনসিসি ব্যাংকে ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার। অন্যদিকে ১ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার গিফট ভাউচার ক্রয়ের মাধ্যমে কেনাকাটা করলে ফ্লাট ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে। আর অনলাইন কেনাকাটায় রয়েছে ফ্রি ডেলিভারি সুবিধা, যদিও বিকেল ৫ থেকে ৬টার মধ্যে অন্তত ৪৯৯ টাকার পণ্য ক্রয় করার শর্ত রয়েছে।
সারা দেশে বে-এর ৯০টি শোরুম আছে। হাজিপাড়া বে’র শোরুম ইনচার্জ রাজিব বলেন, গত বছরের মতোই আমাদের পণ্যের গ্রাহক চাহিদা রয়েছে। আমাদের এই শাখায় কোটি টাকার মতো টার্গেট রয়েছে। আশা করছি শতভাগই পূরণ হবে।
ঈদ অফারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইন ক্রয়ে ২৫ ভাগ ছাড় সুবিধা। পাশাপাশি ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার গিফট ভাউচার রয়েছে, যা ২৫ শতাংশ কম দামে ক্রয় কর পারবে। পণ্য কেনাকাটায় ওই ভাউচার ব্যবহার করতে পারবেন ক্রেতারা। বিকাশ, নগদ ও রকেট ১০-২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক পাচ্ছে।
অন্যদিকে বোলিং-এর এক বিক্রেতা আমিনুল বলেন, কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বসে আছি। টার্গেটের কাছাকাছিও যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। আমাদের স্ক্র্যাচকার্ড, ক্রেডিট কার্ড, জিপি স্টার ও বিকাশ অফারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের অফার রয়েছে। প্রত্যাশিত বিক্রির অপেক্ষায় আছি।
আরএম/এমএ