দ্বিগুণ দামে আলু কিনেছে কোল্ড স্টোরেজ, কেজি ৫০ টাকা ছাড়ানোর শঙ্কা
গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দাম দিয়ে এবার আলু কিনতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা। ফলে সামনে আলুর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর পুরানা পল্টনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সেভর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) যৌথভাবে আসন্ন কোল্ড চেইন বাংলাদেশ ২০২৪ প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, এ বছর কৃষক আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন। গত বছর প্রান্তিক পর্যায়ে আলুর দাম ছিল ৮ থেকে ১২ টাকা। এবার কৃষকরা ২৫-৩২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। বেশি দামে কিনে যেহেতু স্টোরেজ করা হয়েছে তাই এবার আলুর দাম বেশি হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর ৫০ টাকার বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাদের আলু কিনে খেতে হবে।
আরও পড়ুন
আলুর ঘাটতি হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিএসএর সভাপতি বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে বাজারে আলুর দাম অনেক বেশি ছিল। কৃষক বেশি লাভের আশায় পুরোপুরি পরিপক্ব হওয়ার আগেই আগাম আলু জমি থেকে তুলেছে। এতে প্রায় ৩০ শতাংশ আলু আগেই উঠানো হয়ে গেছে; এটাই ঘাটতি হবে। ফলে এবারও আলু আমদানি করতে হবে। ইতোমধ্যে পটেটো চিপস কোম্পানিগুলোর চাহিদার কারণে এক হাজার টন আলু আমদানি করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে ৪ শতাধিক কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। যেগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোক্তারা চান পেঁয়াজ, টমেটো, গাজর, মাংস, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ তৈরিতে নতুন বিনিয়োগ হোক। এজন্য সরকারের কাছে কম সুদে মূলধন চেয়েছেন তারা।
সমন্বিত কুল চেইন নীতি নির্ধারণ ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসার জন্য স্বল্প সুদে ঋণের দাবি করে বিসিএসএর সভাপতি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ ১৩-১৪ শতাংশ। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে আমরা প্রজেক্ট করলে সেটা লাভজনক করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এ কারণে সরকারের উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বা বিদেশ থেকে ফান্ড এনে তিন-চার শতাংশ সুদে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করা। সার্বিক বিষয় নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলছি। আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরছি। বিস্তারিত দাবি তুলে ধরব, আশা করছি সরকার এ খাতে সহযোগিতা করবে।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগ-বালাইয়ের কারণে এ বছর অন্তত ২০ শতাংশ আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে সংকট ও বাজার অস্থিরতার কারণে ভালো দাম পেয়ে কৃষক অন্তত ৩০ শতাংশ আলু আগাম তুলে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এ বছর ৩০ শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও, রংপুরের মতো জেলাগুলোতে ১০-২০ শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। যে কারণে এ বছর বেশি দাম দিয়ে আলু খেতে হবে।
এয়ার কন্ডিশনিং এবং কোল্ড চেইন পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন সংক্রান্ত এফবিসিসিআইয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, পুরো একটি কোল্ড স্টোরেজের কাঠামো আমদানি করতে আমাদের ১ শতাংশের মতো শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু যখন এর একটা পার্টস আমদানি করতে হয় তখন আমাদের এই শুল্ক ১৩০ শতাংশ হয়ে যায়। বিনিয়োগের জন্য এটা একটা বড় সংকট। এটা ৩-৫ শতাংশের মধ্যে হলে ভালো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, কোল্ড স্টোরেজ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, নিরাপদ খাদ্যের জন্যও দরকার। কারণ অনেক খাবারে প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজে রাখলে রাসায়নিক ব্যবহারের দরকার হয় না।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সেভর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়জুল আলম চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর কুড়িলে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আগামী ১৬ থেকে ১৮ মে তিন দিনব্যাপী ‘কোল্ড চেইন বাংলাদেশ ২০২৪’ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রদর্শনীটি কোল্ড চেইন প্রযুক্তির অগ্রগতি প্রদর্শন এবং বাংলাদেশে কোল্ড স্টোরেজ এবং লজিস্টিকসের দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোল্ড স্টোরেজের নানা প্রযুক্তির প্রদর্শনী থাকবে। বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্য খাতে কোল্ড চেইন অবকাঠামোর গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনারও আয়োজন করা হয়েছে।
এসআই/এসকেডি