দোকানে দোকানে শিশুদের বাহারি পোশাক, দাম বেশি-বিক্রি কম
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব বছরের দুই ঈদ। এর মধ্যে সবচেয়ে জাঁকজমকভাবে পালন করে রমজানের ঈদ। এই ঈদকে কেন্দ্র করে ছোট-বড়দের নতুন নতুন পোশাক কেনা থেকে শুরু করে ঈদের দিন চলে বাহারি রকমের খাবারের আয়োজন। আবার এই ঈদে পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তির কাছে নানা ধরনের আবদার থাকে ছোট-বড় সবার।
বিশেষ করে রমজানের ঈদে সবার জন্য নতুন নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার চেষ্টা করেন পরিবারের কর্তাব্যক্তি। সাধারণ মানুষের এই চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন শপিং মলগুলোতেও বাহারি পোশাকের কালেকশন সংযোজন করেন ব্যবসায়ীরা। অন্যবারের মতো এবারও ছোটদের ঈদ কালেকশনে কমতি রখেনি ব্যবসায়ীরা। তবে এখনও বেচা-বিক্রি শুরু না হওয়া চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্যবসায়ীদের কপালে। শপিংমল থেকে ফুটপাতের কোনোখানেই ব্যবসায়ীদের বিক্রি জমে ওঠেনি। কোনো কোনো ব্যবসায়ী ঈদ ব্যবসায় শঙ্কার কথা জানালেও কারও কারও ধারণা এবার ঈদে ভালো ব্যবসা হবে।
এবারের ঈদ হবে গরম ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে। এজন্য ছোটবড় সবাই নতুন নতুন কালেকশনের পাশাপাশি গরম সহনীয় আরামদায়ক পোশাকের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই এ বছর ছোটদের ঈদের পোশাকে সুতি, লিনেন, ভয়েল কাপড়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে মার্কেটে সব ধরনের কাপড়ের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শোরুমে ছোটদের হালকা নকশার সুতি পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। সিনথেটিক কারুকাজ পাঞ্জাবি ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়। শার্ট ও টিশার্ট ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ফ্রক ৯০০ থেকে ৩২০০ টাকায়। টপস ৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। স্কার্ট ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। গাউন ১২০০ থেকে ৪৫০০ টাকায়।
মিরপুর-১০ নম্বরের দেশজ ফ্যাশনের নুন নাহার ঢাকা পোস্টকে জানান, এবার ঈদ উপলক্ষ্যে ছোটদের ভরপুর কালেকশন রয়েছে আমাদের শোরুমে। গরমের কথা চিন্তা করে ভয়েল, বেক্সি ভয়েল, কটন, জর্জেট ধরনের কাপড়ের কালেকশন সংযোজন করা হয়েছে। পোশাক আরামদায়ক করে তুলতে মেয়ে শিশুদের পোশাকে বডি এবং হাতার প্যাটার্নে নানা ধরনের কাট এবং লেয়ার ব্যবহার হয়েছে। ছেলে বাচ্চাদের পোশাকে জিন্স, সুতির প্যান্টসহ বিভিন্ন কাপড়ের গেঞ্জি ও শার্টের কালেকশন রয়েছে। এছাড়া, ছেলে বাচ্চাদের জন্য এক ছাঁটের পাঞ্জাবিও রয়েছে। পাঞ্জাবির গলায় আর কাঁধে আছে সুতার বাহারি কাজ। জমকালো করতে এর সঙ্গে শিশুকে কটি কিনে দিতে পারেন অভিভাবকেরা। এক কথায় সব ধরনের পোশাক রয়েছে।
ক্রেতাদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়েনি। শুক্রবার ও শনিবারেও ক্রেতাদের আশানুরূপ সমাগম ছিল না। যেসব ক্রেতা এসেছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পোশাক দেখে ও দাম জেনে চলে গিয়েছেন। ক্রেতারা দাম শুনলে সবচেয়ে বেশি বিব্রত হচ্ছেন। তারমানে গতবারের তুলনা এবার পোশাকের দাম বাড়তি হওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের এমন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বিক্রি কম হতে পারে। কারণ বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। জামাকাপড়ের দামও বেড়েছে। এজন্য এবার ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি কেমন হবে সে বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা ভালো বিক্রির আশা করি।
মিরপুর-২ নম্বরের বেবি পয়েন্টের শাহ আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, রোজার ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা জমকালো ধাঁচের পোশাকের কালেকশন তুলেছি। শিশুরা যেন পছন্দ করেন সেজন্য সিল্ক, অ্যালাইন কাট, হাতাকাটা পোশাক ছাড়াও ঘটি হাতার ফ্রক ও টপসের কালেকশন রয়েছে। রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবার। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের জন্য দেশীয় পোশাক ফ্রক, স্কার্ট, টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, সারারা, ওয়েস্টার্ন ধাঁচের পোশাক গাউন, টিউনিক, ক্র্যাপ্রি, লেগিংস প্রভৃতিও রয়েছে। এ পোশাকগুলো হালকা পাতলা হওয়ায় শিশুর জন্য আরামদায়ক এবং পরলে দেখতেও আকর্ষণীয় লাগে। ছেলে শিশুদের জন্য ফ্লাওয়ার মোটিভের শার্ট ছাড়াও আছে এক রঙা নকশা করা শার্ট। বড়দের মতো হালকা কাজের পাঞ্জাবি ছাড়াও ব্লক, বাটিক এবং হাতের কাজের ঝলমলে রং নকশার পাঞ্জাবি, অ্যামব্রয়ডারির নকশার কটি, বিভিন্ন ধরনের স্টিকার লাগানো শার্ট পাওয়া যাবে এবার আমাদের আউটলেটে।
তিনি জানান, গত কয়েক মাসের তুলনায় রোজার কয়েকদিনে বিক্রি বেড়েছে। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে যেই পরিমাণ বিক্রি হওয়ার কথা সেই পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে না। হয়ত আর কয়েকদিন পর ক্রেতাদের চাপ বাড়বে। আমরা আশাবাদী অন্যান্যবারের মতো এবারও বিক্রি ভালো হবে। তবে মানুষের অর্থনৈতিক সংকটও আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে। তারপরও ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ে আমরা আশাবাদী।
মিরপুর-২ নম্বরের নান্দনিকের শো-রুমে বাচ্চার জন্য ঈদ শপিং করতে এসেছেন ইশরাত জাহান উর্মি নামের মিরপুর-৬ নম্বরের এক বাসিন্দা। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, আমার এক ছেলে এবং এক মেয়ে বাবু আছে। ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের জন্য জামাকাপড় কিনতে এসেছি। এবারের কালেকশন খুব ভালো কিন্তু দাম অনেক বেশি। গতবার যে ড্রেস ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে কিনেছি, এবার সেই পোশাক ২২শ টাকা থেকে ২৬শ টাকা পর্যন্ত। সবকিছুর দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি।
মিরপুর-১০ নম্বরের ফুটপাত ব্যবসায়ী সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বেচাকেনা শুরু হয়নি। শুক্র ও শনিবার যেই বেচাকেনা হওয়া কথা ছিল তা হয়নি। এজন্য হতাশা কাজ করছে। ক্রেতারা আসছেন, কিন্তু দাম করে আবার চলে যাচ্ছেন। যদিও ঈদের এখনও অনেকদিন বাকি আছে, সেহেতু কয়েকদিন পর বেচাকেনা শুরু হবে বলেই আশা করছি। তবে একটা বিষয় হচ্ছে পোশাকের বাড়তি দামের কারণে মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এবার ঈদে যদি বেচাবিক্রি ভালো না হয় তাহলে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
এসআর/এসএম