কোথাও ৬০০ কোথাও ৮০০, গরুর মাংসের দামে এত পার্থক্য কেন?
জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অনেকটাই কম দামে বিক্রি হচ্ছিল গরুর মাংস। কোথাও ৬০০ টাকা আবার কোথাও দাম রাখা হচ্ছিল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। তবে রমজান মাসকে সামনে রেখে এই দাম আর স্থিতিশীল থাকেনি। কেজি প্রতি তা দাঁড়িয়েছে ৮০০ টাকায়। তবে স্থানভেদে কোথাও কোথাও এখনও ৬০০ টাকার নিচেও পাওয়া যাচ্ছে।
তাহলে একই পণ্যের দামে এতো পার্থক্য কেন? তবে কী মাংস বিক্রেতারা কম দামে বিক্রি করছেন বা তারা লোকসান দিয়ে ব্যবসা করছেন? এমন নানা প্রশ্ন অনেকের মাঝেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ জায়গাতেই ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। কোথাও সেটা ৮০০ টাকা। মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেট, মহাখালী কাঁচা বাজার, হাতিরপুল কাঁচা বাজার ও বনানী কাঁচা বাজার, গুলশান নতুন বাজারে এই দাম দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করছেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতিভুক্ত কিছু ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে খিলগাঁও, রায়ের বাজার, মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন, বংশাল, মৌলভীবাজার, কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ী এই দামে মাংস বিক্রি করছেন।
রমজান উপলক্ষ্যে ছাড়কৃত মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন তারা। রাজধানীর আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের দোকানে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে ৫৯৫ টাকা কেজি দরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতানের ছোট দোকান ঘিরে মানুষের উপস্থিতি। পুরুষ-নারী পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক মানুষ। সেখানে গরু আনা, জবাই, চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটা, বিক্রয়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা শ্রমিক কাজ করছেন। দোকানটির স্বত্বাধিকারী খলিল নিজে উপস্থিত থেকে যাবতীয় কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন।
ক্রেতার চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা আর চরম ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সুযোগও পাচ্ছেন না। একটি গরু জবাইয়ের পর শেষ না হতেই আবারো আনা হচ্ছে পাশেই খুঁটিতে বেঁধে রাখা গরু। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে একের পর এক গরু জবাই করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী খলিল বলছেন, মাংস বিক্রিতে তেমন লাভ করেন না তিনি। তাদের লভ্যাংশ আসে গরুর নাড়ি-ভুড়ি, চর্বি, শিং ইত্যাদি বিক্রি করে।
আরও পড়ুন
কিন্তু কীভাবে? দামের পার্থক্যের নেপথ্যেই বা কী কারণ জড়িয়ে আছে?
বিবিসি বাংলা গরুর মাংসের দামের পার্থক্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বেশকিছু বিষয়ের উপর গরুর মাংসের দাম কম বেশি হওয়া নির্ভর করে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক পলিসির কারণে মাংসের দামের এই উঠানামা।
এব্যাপারে পলাশী বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলছেন, অনেক জায়গায় সাত-আট মণ পর্যন্ত ওজনের গরু জবাই করা হলেও, পলাশী বাজারে আড়াই মণের বেশি ওজনের গরু আনা হয় না। ফলে মাংসের গুণগত মান ভালো থাকে। তাছাড়া, জবাইয়ের আগে পশু চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। পণ্যের মান বজায় রাখতে গিয়ে দাম অন্য জায়গার চেয়ে বেশি পড়ে যায়।
অনেক ব্যবসায়ীই আবার নিজেরা জবাই না করে, কেজি দরে মাংস কিনে এনে বিক্রি করে থাকেন। এতে নিজেদের লাভ রাখতে দাম বেশি ধরতে হয়।
ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলছেন, কমদামে যারা বিক্রি করছেন তারাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে পশু সংগ্রহ করেন বলে ভালো মান এবং স্বল্প মূল্যের কারণে ক্রেতাদের ভিড় এবং বিক্রি অনেক বেশি হয় এসব দোকানে।
এদিকে রমজান উপলক্ষ্যে ১০ মার্চ থেকে রাজধানীর ৩০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। সেক্ষেত্রে গরুর মাংস ৬০০ টাকায়, খাসির মাংস ৯০০ টাকায় আর সলিড ব্রয়লার মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পিএইচ