অটোমোবাইল খাত বিকাশে সহায়ক নীতিমালা হচ্ছে
অটোমোবাইল খাতের শিল্পায়নকে সম্প্রসারণ ও বিকাশে সহায়ক নীতিমালা প্রস্তুতের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
রোববার (১৮ এপ্রিল) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অটোমোবাইল শিল্পের উন্নয়ন : বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে তা আরও বাড়বে, যার ফলে দেশের মানুষের মাঝে নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত যানবাহন ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। যেটি অটোমোবাইল খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
তিনি জানান, এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য একটি সহায়ক নীতিমালার খসড়া প্রস্তুতের কাজ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়, যেটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে এ খাতের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে শিল্প-কারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসার জন্য দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। এজন্য অটোমোবাইল খাতের সার্বিক উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম উন্নত করতে শিল্প ও শিক্ষা খাতের সমন্বয় খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, অনেক দেশের শিল্পায়নে অটোমোবাইল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে জাপানে এ খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হওয়ায় অটোমোবাইল শিল্প উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের সেই উদাহরণ অনুসরণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এজন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা অপরিহার্য। সেই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারিখাত একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি বলে, জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি বাংলাদেশে ‘সিকেডি প্ল্যান্ট’ স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এ বিষয়ক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলমান আছে। অটোমোবাইল খাতের উন্নয়নে স্থানীয় হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশ একান্ত অপরিহার্য।
ওয়েবিনারের নির্ধারিত আলোচনায় উত্তরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাতিউর রহমান বলেন, দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে অটোমোবাইল খাতের উন্নয়নের প্রচুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পর্যালোচনার মাধ্যমে খসড়া অটোমোবাইল নীতিমালা বাস্তবায়ন করা জরুরি।
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো নিজস্ব গাড়ির ব্রান্ড তৈরি করা। আমরা বর্তমানের অ্যাসেম্বেলিং হতে ম্যানুফেকচার্স হচ্ছি। এজন্য খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
বারভিডা’র সভাপতি আব্দুল হক বলেন, অটোমোবাইল খাতের বিকাশে আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরিই বড় চ্যালেঞ্জ এবং নিজস্ব বাজার সম্প্রসারণে সরকারকে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি শিল্পমন্ত্রণালয়কে এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। গাড়ি আমদানিতে আমাদেরকে ১২০% ট্যাক্স দিতে হয়, যার জন্য আমদানিকৃত গাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, স্থানীয় বাজারে চাহিদা আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ খাতের বিকাশে দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদান একান্ত অপরিহার্য।
ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইফাদ গ্রুপ অব বাংলাদেশের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন আহমেদ। সংলাপে ডিসিসিআই’র সহসভাপতি এন কে এ মবিন ও মনোয়ার হোসেনসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ যুক্ত ছিলেন।
আরএম/এইচকে