‘কঠিন পরিস্থিতি’তে ডলারের বাজার, উদ্বিগ্ন ব্যাংকের এমডিরা
নানা কারণে বাংলাদেশে ডলারের বাজার বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি দিন দিন ‘আরও কঠিন’ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এবং নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রিসহ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহীরা।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরুরি ভিত্তিতে কিছু সহায়তা চাওয়া হয়। বৈঠকে ২১টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ব্যাংক খাতের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবিবি ও বাফেদার সমন্বয়ে গতকাল (৮ নভেম্বর) ডলার কেনাবেচার একটা রেট বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, ওই রেটের মধ্যে সবাই থাকবে।
সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ে ব্যাংকগুলো সরকারি ও নিজস্ব প্রণোদনাসহ ডলারের দর কোনোভাবেই ১১৬ টাকার বেশি দিতে পারবে না। তবে আমদানিকারকদের কাছে ব্যাংকগুলোকে ১১১ টাকায় বিক্রি করতে হবে; এর বেশি নেওয়া যাবে না। কেউ যদি এটা অমান্য করে তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
ডলারের রেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলারের আগের রেট পরিবর্তন করা হয়নি। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে। আর আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেওয়া যাবে আগের মতোই ১১১ টাকা। এখন কোনো ব্যাংক যদি বেশি দামে অর্থাৎ সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে ডলার কেনে; তাহলে তার নিজ খরচ থেকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে। তবে এখন প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ এবং ব্যাংকের সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ সব মিলিয়ে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা দিতে পারবে। তার মানে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা পাবেন স্বজনরা।
আমদানিকারকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্য ১১১ টাকার চেয়ে ডলারের দাম বেশি নিচ্ছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্যাংক নির্বাহীদের এ নেতা বলেন, কোন ব্যবসায়ী বেশি দাম নিচ্ছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডলারের দাম বার বার পরিবর্তন করার কারণ জানতে চাইলে এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, ডলারের বাজার খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্থিতিশীল করার জন্য আমরা সব স্টেকহোল্ডার একসঙ্গে কাজ করছি। কিছু ব্যাংক বেশি সমস্যায় আছে, তাদের এ রেট মানতে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। যেন বাজার অস্থিতিশীল না হয়।
জরুরি বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, গত ৬ মাসে এমন সমস্যা ছিল না; ডলারের দাম ১২৪ টাকা কখনো হয়নি। বাড়তি প্রণোদনা উন্মুক্ত করায় ডলারের বাজারে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এখন বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা (এবিবি ও বাফেদা) একটা রেট নির্ধারণ করেছে। তাদের নির্ধারিত রেট বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য চেয়েছেন। কারণ এবিবি ও বাফেদা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
যারা বেশি দামে ডলার কিনেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, তাদের ১২ টাকা লোকসান দিয়ে ১১১ টাকায় ডলার বিক্রি করতে হবে এটাই তো বড় শাস্তি। নতুন করে শাস্তির প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে সংকট আরও প্রকট হয়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় তারা সভা করে ডলারের রেট নির্ধারণ করে আসছে।
এদিকে খোলা বাজারে খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, আজ নগদ খুচরা ডলার বিক্রি হয় ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৬ টাকায়। বুধবার ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা। এর আগে কখনো ডলারের দাম এত বেশি হয়নি।
এসআই/এসকেডি