করোনার বছরে রফতানি আয় কমেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা
রফতানি খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে মহামারি কোভিড-১৯। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে রফতানি আয় কমেছে ৪২ হাজার ২২১ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে যার পরিমাণ ১২.৮৬ ভাগ। বড় আঘাত আসে ২০২০-এর এপ্রিল ও মে মাসে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পরিসংখ্যান বলছে, করোনা সংক্রমণের আগের ১২ মাসে বা এক বছরে (এপ্রিল ২০১৯-মার্চ ২০২০) বাংলাদেশ পণ্য রফতানির মাধ্যমে আয় করেছে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। পরের বছর কোভিডের সময় যা নেমে আসে ৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলারে। অর্থাৎ কোভিডের বছরে রফতানি কমে ৪৯৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ৪২ হাজার ২২১ কোটি টাকা।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রথম কোভিড শনাক্তের পরের মাসেই রফতানিতে সবচেয়ে বড় পতন দেখা যায়। যার ধারাবাহিকতা দেখে গেছে পরের দুই মাসেও। তাই রফতানি আয়ের বড় পার্থক্য গড়ে উঠেছে করোনা আক্রমণের প্রথম তিন মাসেই। ২০২০ সালের এপ্রিল, মে ও জুলাই মাসে রফতানি হয়েছিল যথাক্রমে ৫২ কোটি, ১৪৬ কোটি ও ২৭১ কোটি ডলারের। যেখানে ২০১৯ সালের ওই তিন মাসে রফতানি আয় এসেছে ৩০৩ কোটি, ৩৮১ কোটি ও ২৭৮ কোটি ডলার। ওই তিন মাসের রফতানি আয় কমেছিল ৪৯৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার বা ৪১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে যার পরিমাণ ৫১ ভাগ।
যেখানে বাকি নয় মাসের রফতানি আয়ের পার্থক্য মাত্র ৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ইপিবি’র দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে দেশে রফতানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৩৯ ডলার। এদিকে, করোনার বছর ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে রফতানি আয় আসে ২ হাজার ৮৯৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
যদিও ইপিবি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, একক মাস হিসেবে মার্চে রফতানি বেড়েছে প্রায় ১২.৫৯ শতাংশ। মার্চ মাসে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৭৩ কোটি ডলার।
রফতানি আয় কমে যাওয়াসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময়ই লকডাউন ও সাধারণ ছুটির বিপক্ষে ছিলাম। মানুষকে যদি তার আয় থেকে দূরে রাখা হয়, সে কতদিন চলতে পারবে। তাদের কাজের মধ্যে রাখতেই হবে। প্রথম লকডাউনের তিন মাসে কার্যত বিনিয়োগ ও রফতানি বন্ধ ছিল। করোনা প্রতিরোধের দ্বিতীয় বিধিনিষেধে আগের মতো সব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি, এটা ভালো দিক। তারপরও নেতিবাচক প্রভাব থেকেই যাবে।
ইপিবি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি। অন্যদিকে হিমায়িত মাছসহ সব ধরনের হিমায়িত খাদ্যের রফতানি কমেছে ৯ শতাংশের মতো। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ৬ শতাংশের বেশি রফতানি কমেছে। ফার্নিচারের রফতানি কমেছে ১৩ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি রফতানি কমেছে জাহাজ শিল্পে। এই খাতে রফতানি কমেছে ৯৮.৭৫ শতাংশ।
পাট ও পাটপণ্যের রফতানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। হোম টেক্সটাইলের রফতানি বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এছাড়াও ওষুধের ১২ শতাংশ, কৃষিপণ্যের প্রায় ৪ শতাংশ এবং চায়ের ২৩ শতাংশ রফতানি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার জাতীয় পণ্যে। যার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯.৭২ শতাংশ।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, রফতানির পাশাপাশি পোশাকের দর কমে যাচ্ছে, যা বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় গেল মার্চে দর কমেছে ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। রফতানি বাজারগুলোতে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশেও চলতি লকডাউনের ফলে এই শিল্প আরও চাপে পড়বে।
করোনার প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব বাড়লে দেশের পোশাক রফতানিকারকদের ক্রয়াদেশ একের পর বাতিল হয়ে যায়। যার প্রভাবে প্রায় ৪৫০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
আরএম/এমএইচএস/জেএস