ভিসা নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে অস্থির পুঁজিবাজার
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা এবং এর প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ভিসানীতিকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। ফলে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর মোট পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দুই দিনেই পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। বাকি তিনদিন সূচক বেড়েছে নামমাত্র।
এই দরপতনে সবশেষ সাত কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের পুঁজি (মূলধন) কমেছে ২ হাজার ১৬৮ কোটি ৪৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এর মধ্যে রোববার (১ অক্টোবর) একদিনেই মূলধন কমেছে ৫৯৮ কোটি টাকা।
সামনের দিনগুলোতে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে দুই কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। একটি হচ্ছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আরেকটি হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটি নিয়ে শঙ্কা। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন চলতি অক্টোবর মাস থেকেই বাজারে আরও দরপতন হবে। ফলে একদিকে নতুন করে বিনিয়োগ থেকে সরে আসছেন তারা, অন্যদিকে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন।
বাজারের এই দরপতন কোনোভাবেই যৌক্তিক না, মার্কেট মেকাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে প্রথম কার্যদিবস লেনদেন হয়। সেদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ হাজার ৩০৯ পয়েন্ট থেকে ২৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৮০ পয়েন্টে নেমে আসে। তারপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ উদ্যোগের ফলে ২৫, ২৬ এবং ২৭ সেপ্টেম্বর তিনদিনে মাত্র চার পয়েন্ট বাড়ে সূচক। কিন্তু তিনদিনের ছুটি শেষে রোববার (১ অক্টোবর) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আবারও দরপতন হয়েছে। আজ সূচক কমেছে ২০ পয়েন্ট। ফলে ভিসানীতি প্রয়োগ শুরুর পর দুই কার্যদিবসেই সূচক কমেছে প্রায় ৫০ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন
বাজারের এই দরপতন কোনোভাবেই যৌক্তিক না, মার্কেট মেকাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মার্কেট মেকাররা দীর্ঘ সময় বড় ধরনের ফান্ড বিমা খাতে একত্রিত করেছে, তারা অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ করেছে। তবে এখন তাদের একটি বড় অংশ বিক্রি করেছে।
রোববারের দরপতন সম্পর্কে তিনি বলেন, কারখানা বন্ধ থাকাসহ বেশ কিছু কোম্পানির খারাপ খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফলে আজ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল জাঙ্ক শেয়ারের দাম কমবে, বিপরীতে বিমা খাতের শেয়ারের দাম বাড়বে। কিন্তু বিমা খাতের পতন দেখে মনে হচ্ছে একটি শ্রেণি বাজার থেকে সেভ সাইডে থাকতে চাচ্ছে। তারা ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পর থেকে ওয়েট অ্যান্ড সি পলিসিতে আছেন। নির্বাচনের আগে তারা নতুন করে বিনিয়োগ করবে বলে মনে হচ্ছে না।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফ্লোর প্রাইসের বাজারে একদিনে ২০ পয়েন্ট কমা মানে স্বাভাবিক বাজারে ২০০ পয়েন্ট সূচক পতন হওয়া। অর্থাৎ আজ বড় ধরনের পতন হয়েছে। এই পতন দুটি কারণে হয়েছে। একটি হচ্ছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, আরেকটি হচ্ছে নির্বাচন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সবসময় মার্কেট একটু স্লো যায়। কিন্তু এখন ৪-৫শ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি আইটেমে লেনদেন হচ্ছে। এটা কোনো স্বাভাবিক মার্কেটে হতে পারে না।
বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরো ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজার এখন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। এ খবরে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজার দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তবে বর্তমান বাজার স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। গত এক বছর কিংবা দুই বছরের গড় লেনদেনের দিক থেকে দেখা গেছে লেনদেনের গতি ঠিক আছে। কারণ সূচক ২০০ পয়েন্ট ওঠানামার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারের এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে হবে, দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
এমআই/জেডএস