যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে আটকা ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা না থাকায় বছরে ৮০০ মিলিয়ন (৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ-মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ’ বিষয়ক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এই তথ্য জানান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বাজারে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত সুবিধায় তুলা রপ্তানি করে। অথচ এই তুলার তৈরি পোশাক রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা পায় না। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ শুল্ক কর দিয়ে পোশাক পণ্য রপ্তানি করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি জিএসপি সুবিধা দেয় তবে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য অতিরিক্ত রপ্তানি হবে ৪০০ মিলিয়ন থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার। তাতে আগামী ৫ থেকে ৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজারে ৩ বিলিয়ন তুলা রপ্তানি করতে পরবে।
এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বর্তমানে ১০ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করছে। তার বিপরীতে ৩ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ পণ্য আমদানি করছে। এটা আরও বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে জিএসপি স্কিম হলো-বাংলাদেশ সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত সুবিধায় (অর্থাৎ ১৫ শতাংশ সুবিধা) যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে সুতা আমদানি করে। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় পোশাক সরবরাহকারী এবং সরকার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পোশাকের উপর ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক মওকুফের অনুমতি জন্য আলোচনা করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার তা দিচ্ছে না।
পিআরআই গবেষণা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশেরও ফাইবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত কারণ বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় ৯০ মিলিয়ন বেল তুলার দুই শতাংশেরও কম উৎপাদন করে না এবং প্রায় পুরো চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে ফাইবারের জন্য একটি ভালো উৎস হয়ে উঠছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক এবং বিশ্বব্যাপী বৃহৎ আয়তনের এবং কম মূল্যের পোশাকের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদন কেন্দ্র।
বাংলাদেশের জন্য জিএসপি মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, তুলা জিএসপি স্কিম উভয় দেশের জন্য একটি জয়ী পরিস্থিতি হবে কারণ স্থানীয় মিলাররা মোট ৯টির মধ্যে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ তুলা আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক মিলিয়ন বেল প্রয়োজনীয় তুলা আমদানি করা হয়।
স্থানীয় সরবরাহকারীরা এক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ চাহিদা মেটাতে পারে বলে মার্কিন বাজার ঘুরে দেখার অনেক সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে ২০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩ শতাংশ তুলা আমদানি করে।
তিনি বলেন, জো বাইডেন প্রশাসনকে ২০০৫ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পঞ্চম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুসরণ করা উচিত যেখানে উন্নত দেশগুলো ১০০ শতাংশ পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছিল, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৯৭ শতাংশ-এ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, তুলা থেকে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে না যদিও তুলাবিহীন ফাইবার তৈরি পোশাকের চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে।
বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ যেমন মুনাফা প্রত্যাবাসনের সমস্যা, মেধা সম্পত্তি অধিকার, ডেটা সুরক্ষা আইন এবং লজিস্টিক পরিষেবাগুলোর চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন।
মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, আইসিটি, শিক্ষায় বিনিয়োগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান ফে।
তিনি শ্রম অধিকার, শ্রম আইন সংস্কার এবং জিএসপি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সংগঠনের স্বাধীনতার উন্নতির জন্য বাংলাদেশকে পরামর্শ দেন, যা এখন ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে শেষ হয়ে গেছে। মার্কিন কংগ্রেস এখন পর্যন্ত নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফজলি শামীম এহসান বলেন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক কিছু করেছে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিচ্ছে না । কারণ ২০১৩ সালের জুন থেকে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি এখনও স্থগিত রয়েছে।
শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ খুব বেশি কাজের আদেশ পাচ্ছে না যা চীন থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। কারণ এই অর্ডারগুলোর বেশিরভাগই অন্যান্য দেশ যেমন কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে শূন্য-শুল্ক সুবিধা নেওয়ার জন্য যাচ্ছে। আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট-এর অধীনে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা এবং সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
এমআই/এসকেডি