প্রাণ এগ্রোর বন্ডে মেটলাইফের ২৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগ
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাণ এগ্রো লিমিটেড ২৬২ কোটি টাকার অনশোর বন্ডের লেনদেন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। আট বছর মেয়াদি এ বন্ডের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ কোম্পানির অবকাঠামো সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এ বন্ডে পুরো বিনিয়োগ করেছে মেটলাইফ বাংলাদেশ।
বন্ডটির আংশিক জামানতকারী হিসেবে রয়েছে গ্যারান্টকো। তবে এই প্রথম দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে লেনদেনে সুনামের কারণে বন্ডের কিছু অংশে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই অর্থায়ন পেতে সক্ষম হয়েছে প্রাণ এগ্রো।
বন্ডের অর্থ প্রাণ এগ্রোর কারখানায় প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ ও নুডলস, কনফেকশনারি, কালিনারি, কুকিং অয়েল এবং বেকারি পণ্য তৈরিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যবহার করা হবে।
বর্তমানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে ১ লাখ তালিকাভুক্ত চুক্তিভিত্তিক কৃষক রয়েছে এবং গ্রুপের অধীনে ১ রাখ ৪৫ হাজার লোক কাজ করছে। নতুন এ অর্থায়নের ফলে আরও ২৪০ চুক্তিভিত্তিক খামারি উপকৃত হবেন। এছাড়া এ অর্থায়নের ফলে কারখানা পরিচালনা ও রক্ষাণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ৫০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটলে রেডিসন ব্লু’তে বন্ড ক্লোজিং উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, যুক্তরাজ্য সরকারের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ড. ডানকান ওভারভিল্ড, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, মেটলাইফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এলিনা বোটারোভা ও গ্যারান্টকো’র ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব এশিয়া নিশান্ত কুমার বন্ডের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
বন্ড সম্পর্কে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট ফ্যাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন দেশে প্রাণের উৎপাদিত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ অর্থায়নের ফলে চাহিদাকৃত পণ্যের জোগান দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এর ফলে প্রাণ এর রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে মেটলাইফের মোট বিনিয়োগ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমরা এমন বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজি যা গ্রাহকদের সেবা দিতে আমাদের ব্যবসায়িক সক্ষমতা জোরদার করে। একইসঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবদান রাখে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে আরও সফল হতে সহায়তা করার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে এই নতুন প্রাণ এগ্রো বন্ডে বিনিয়োগ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
গ্যারান্টকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেইথ আল ফালাকি বলেন, প্রাণ এগ্রোর সঙ্গে দ্বিতীয় লেনদেনটি সম্পন্ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। যা বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট এগিয়ে নিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর আগেও প্রাণ এগ্রোর ব্যাবসায়িক সম্প্রসারণে ২.১ বিলিয়ন ডলার বন্ডে জামানতকারী হয়েছে গ্যারান্টকো যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম কর্পোরেট বন্ডগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনগণের সুবিধার্থে পুঁজিবাজারের বিকাশে এ ধরনের বন্ডের প্রভাব রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এটি প্রাণ এগ্রোর সঙ্গে গ্যারান্টকো ও মেটলাইফের দ্বিতীয় লেনদেন। এর আগে ২০২১ সালে প্রাণ এগ্রো প্রথম অনশোর বন্ড ইস্যু করে অর্থ সংগ্রহ করে যার শতভাগ জামানতকারী ছিল গ্যারান্টকো এবং বিনিয়োগকারী ছিল মেটলাইফ। বন্ডটি ছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের উদ্যোগে নবগঠিত অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত প্রথম বন্ড। নতুন লেনদেনটির ফলে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের মাধ্যমে সেকেন্ডারি মার্কেটে কর্পোরেট বন্ডের লেনদেনের কার্যকারিতা আরও স্পষ্ট করেছে। এছাড়া এ ধরনের বন্ড দেশের কর্পোরেট বন্ডের বাজারে অর্থবহ প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) ফখরুল আহসান, মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ এবং মেটলাইফ বাংলাদেশের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার আলা উদ্দিনসহ বন্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মেটলাইফ বিশ্বের অন্যতম একটি আর্থিক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি, যা তার ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের বিমা, এ্যানুইটি, গ্রুপ বিমা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা সেবা প্রদানের মাধ্যমে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে। ১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মেটলাইফ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ল্যাটিন আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে।
প্রায় ১০ লাখেরও বেশি গ্রাহকের সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান। বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
কেএ