উৎপাদন বন্ধ ঢাকা ডাইংয়ের, জানাল এক মাস পর!
দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। মূলত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বকেয়া বিলের জন্য গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ঢাকা ডাইংয়ের।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং দুই স্টক এক্সচেঞ্জের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) কাছে উৎপাদন বন্ধের খবর এক মাসের বেশি সময় গোপন রাখে কোম্পানিটি। এ রকম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না জানিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তালিকাভুক্তি আইন অনুসারে, যে দিনের কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ওই দিনই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কমিশনকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অবগতির জন্য গণমাধ্যমকেও জানাতে হয়।
তিতাস সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের বকেয়া বিল থাকায় ঢাকা ডাইংকে প্রথমে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও পরিশোধ না করায় গত ২৬ জুলাই থেকে ঢাকা ডাইংকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার দিন থেকে কোম্পানির পণ্য উৎপাদনের ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সে হিসেবে ২৬ জুলাই থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট এক মাস ৯ দিন কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
সবশেষ গত ৩০ আগস্ট উৎপাদন বন্ধের মূল্য সংবেদনশীল এ তথ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানিয়েছে কোম্পানিটি।
কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ২৬ জুলাই থেকে তিতাস গ্যাস সাময়িকভাবে ঢাকা ডাইংয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এ কারণে কোম্পানির উৎপাদন ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মতিঝিলের শরিফ ম্যানশনের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অফিস অনেকটাই ফাঁকা। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে এই গ্রুপের অন্য তিন কোম্পানির অফিসের কর্মকর্তা রয়েছেন। ঢাকা ডাইংয়ের কথা বলার মতো কোনো কর্মকর্তা নেই। এমডি, চেয়ারম্যান এবং কোম্পানির সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা রয়েছেন তারা কোম্পানির গাজীপুরের কারখানায় বসেন।
এ বিষয়ে কোম্পানির সচিব আব্দুল্লাহ শিবলীর কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় দিয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রশ্ন শুনে কেটে দেন। তারপরেও একাধিক ফোন নম্বর থেকে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাম না প্রকাশের শর্তে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত উৎপাদন শুরু হওয়ার খবর আসেনি। তিনি বলেন, কী কারণে ২৬ জুলাই উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরও তথ্য দেয়নি তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সব কিছু দেখে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুরে ঢাকা ডাইং কারখানার এক শ্রমিক জানান, গত ২৬ জুলাই থেকে কারখানা বন্ধ। কারখানায় কর্মরত প্রায় পাঁচশ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাজীপুর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়ম অনুসারে যে কোনো কোম্পানিকে আমরা মাস শেষ হওয়ার পর আরও ৪৫ দিন বকেয়া বিল পরিশোধের সুযোগ দিই। এই কোম্পানির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কোম্পানিটির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত দুই মাসের বিল বকেয়া রয়েছে। তাই আমরা গ্যাস সংযোগ বন্ধ করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানিকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানাতে হয়। যেদিন ঘটনা ঘটে সেদিনই জানাতে হয়। এই কোম্পানির ক্ষেত্রে কি ঘটছে তা দেখতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কী কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কমিশনকে জানায়নি তা দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির শেয়ারের সংখ্যা ৮ কোটি ৭১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৩টি। কোম্পানির শেয়ারের বর্তমান মূল্য ১৩ টাকা ২০ পয়সা। কোম্পানিটি ২০২২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ১ জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ জুন ২০২২ সালে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১৪ পয়সা। তার আগের বছর ছিল ৬০ পয়সা।
এমআই/এসএম