মূল্যস্ফীতি সামলানোর বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। কোনো কিছুতেই দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি চলছে। এমন চরম কঠিন বাস্তবতা ও চাপ নিয়ে শনিবার থেকে নতুন অর্থবছর ২০২৩-২৪ শুরু হলো। যদিও রোববার থেকে এর আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়ন শুরু হবে।
গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়। এর আগে ১ জুন জাতীয় সংসদে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে সংসদে বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অন্যান্য বছর ৩০ জুন বাজেট পাস হলেও এবার ঈদুল আজহার ছুটির কারণে ৫ দিন আগেই সংসদে পাস হয় নতুন বাজেট।
চলতি বছর মূল্যস্ফীতির চাপে জীবন যাত্রায় ব্যয় সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে। এছাড়া নির্বাচনী বছর হওয়ায় রয়েছে নানামুখী চাপ। এদিকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে সরকারকে অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ করতে হবে। জ্বালানি তেল সংকট, নির্বাচনী বাজেট, এমপিদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে সরকারকে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশাল ঘাটতির বাজেট কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়ে নানা মহলের প্রশ্ন রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে সরকারের। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থপাচার ঠেকানো আর কর ফাঁকি রোধ করতে পারলে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। না হয় সামনে অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকট হবে।
তারা বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ তাদের জীবন যাপন করতে হিমশিম খাচ্ছে। দিন দিন মানুষের জীবন মান নামছে নিচের দিকে। তাই বর্তমানে অর্থনীতি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠিন চ্যালেঞ্জে। আর সে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে শুরু হলো নতুন অর্থবছর। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বড় আয় আর ব্যয়ের ফর্দ ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা বলছেন, আকার যাই হোক, এটি বাস্তবায়ন করাটা জরুরি।
এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে চাপ আছে। বড় ব্যয়ের পরিকল্পনা থেকে আয় করতে হবে ৫ লাখ কোটি টাকা। তাই কর ফাঁকি ঠেকানো ও নতুন করদাতা খুঁজতে হবে এনবিআরকে। নির্বাচনের বছরে বিশেষজ্ঞরা অর্থ পাচার ঠেকাতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এবারের বাজেটে সরকারের মূল্যস্ফীতির লাগাম ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই ধরে রাখার লক্ষ্য রয়েছে। জিডিপি হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
২ হাজার টাকা আয়কর প্রত্যাহার সব মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে
প্রস্তাবিত বাজেট অর্থমন্ত্রী জানান, যাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন আছে তাদের ন্যূনতম ২ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক কর দিতে হবে।
এমন প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করে সিপিডিসহ বিভিন্ন মহল বাধ্যতামূলক এ আয়কর প্রত্যাহারের দাবি তোলে। এরপর ২৫ জুন অর্থবিল পাসের দিন ন্যূনতম ২ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক কর আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এছাড়াও হজ যাত্রীদের মতো ওমরা হজ যাত্রীদেরও ভ্রমণ কর অব্যাহতির দেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি ছিল বাজেটের সবচেয়ে প্রশংসনীয় কাজ।
সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ প্রণোদনা
সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৫ জুন সংসদে অর্থমন্ত্রীকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য বলেছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর ৫ শতাংশ প্রণোদনা বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাস থেকে এই বিশেষ প্রণোদনা পাবেন সরকারি কর্মচারীর। দেশে সরকারি চাকরিজীবী প্রায় ১৪ লাখ। এর সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বিভিন্ন কর্পোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেতন-ভাতা বাবদ ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের খসড়া তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। সেখানে আরও ৫ শতাংশ প্রণোদনার জন্য সরকারের বাড়তি ব্যয় হবে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা।
প্রণোদনার টাকা কবে থেকে পাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা– এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার পর থেকেই অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। পুরো কাজ করতে দেড় মাস লাগতে পারে। প্রথমে কত টাকা লাগবে তার একটি সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করে অর্থমন্ত্রী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হবে। তারপর কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কত টাকা পাবে তা তাদের দিতে হবে।
তিনি বলেন, এটা যে মাসেই হোক তা কার্যকর হবে জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে।
এনএম/এসকেডি