সুহৃদের এজিএম কবে জানে না কোম্পানি, দুশ্চিন্তায় ৬ কোটি শেয়ারধারী
ঘোষিত লভ্যাংশ পায়নি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারহোল্ডাররা। এখন ৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত বছরের কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) কবে হবে বলতে পারছে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে চলতি বছরের মধ্যেই আমাদের এজিএম করতে হবে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এজিএম করব। তবে কবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। কারণ এটা পর্ষদের ব্যাপার।
যারা এখনও ২০১৯ সালের ঘোষিত লভ্যাংশ পায়নি তাদের কী লভ্যাংশ দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লভ্যাংশ সব দিতে না পারলেও কিছু হলেও দেওয়া হবে।
কোম্পানি আইনের ৪১(২) এবং ৮৫(৩) অনুযায়ী গত ২৮ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের এজিএম শেষ করার কথা কিন্তু কোম্পানিটি নির্ধারিত সময়ে করেনি। বরং তারা আদালতে গিয়ে সময় বাড়িয়েছে। আদালত কোম্পানিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এজিএম করার অনুমতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান।
ফলে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫০টি শেয়ারধারীরা কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
অবসরের টাকায় এই কোম্পানির শেয়ার কেনা মোতাহার হোসেন নামের চট্টগ্রামের এক শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার এক আত্মীয়ের কথায় এই কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলাম। তিনি শেয়ার বিক্রি করে চলে গেছেন।
এই শিক্ষক বলেন, কোম্পানি আমাকে ২০১৯ সালের শেয়ারের লভ্যাংশ দেয়নি। এখন ২০২০ সালের এজিএম কবে হবে তা বলতে পারছি না। অনেক জানার চেষ্টা করছি কিন্তু কোম্পানির কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের নির্দেশনার ওপর তো আমরা কিছু বলতে পারি না। তবে তারা যাতে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দ্রুত দেন সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি তারা যেন এজিএম করেন সেজন্য তাগাদা দিচ্ছি।
২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে লোকসান দেখিয়েছে। এরপর ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয় সুহৃদ। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩০ জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা বণ্টন করেনি কোম্পানিটি।
পরে ডিপজিটরি আইন ১৯৯৯ এর ১৩ ধারা অনুযায়ী তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
কয়েকদিন পর বিএসইসি সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৩০ জুন ২০১৯ এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ও পরিচালকদের বিও হিসেব জব্দ করা হয়।
এদিকে কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখিয়েছে এক টাকা ৮৯ পয়সা। সোমবার (২৯ মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১২ টাকা ১০ পয়সা।
বর্তমানে সুহৃদের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে কোম্পানির ১২ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার।
এমআই/এসএসএইচ