ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি তুহিন রেজাকে অপসারণ
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজাকে অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনিয়ম করে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফার্স্ট ফাইন্যান্স-এর চেয়ারম্যান খান মোহাম্মদ মঈনুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই তার (এমডি তুহিন রেজা) বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের অভিযোগ ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে এমডি নিয়োগ দিতে বলেছে। আমরা তাদের গাইডলাইন অনুসারে নতুন এমডি নিয়োগ দেবো, যার প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে তুহিন রেজাকে এমডি পদ অনুমোদনের জন্য একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তা বার বার নাকচ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ গত ১৫ মার্চ তাকে সরিয়ে দ্রুত নিয়মিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিতে প্রতিষ্ঠানটির পষর্দ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর আর তাকে এমডি পদে রাখার সুযোগ নেই। যদিও এখন পর্যন্ত ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ওয়েব সাইটে এমডি ও সিইও (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে তুহিন রেজার নাম রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের অতিরিক্ত এমডি থাকাকালীন সময়ে তুহিন রেজার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
এর মধ্যে দুটি অভিযোগ অন্যতম। এর একটি হলো- তুহিন রেজা ব্যক্তিগত সিআইবি তথ্য গোপন করেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির মানব সম্পদ বিভাগে তার নথিতে সিআইবি সংযোজন করা হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা সরিয়ে ফেলেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ- কোনো বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ২২ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস রুলের ব্যত্যয় ঘটান।
এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির ২৮৩তম পর্ষদ সভায় তুহিন রেজারকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ অথবা তা না করলে তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৭ সালের ২ মে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। পরদিন ৩ মে পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়।
পরবর্তীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি তুহিন রেজাকে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই পুনরায় অতিরিক্ত এমডি পদে নিয়োগ দেয়। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অনুমতি নির্দেশনা’ থাকলেও তা পরিপালন করেনি ফার্স্ট ফাইন্যান্স। দোষী ব্যক্তিকে পুর্নবহালের বিষয়ে ফাস্ট ফাইন্যান্স এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৩১০তম বোর্ডে সভায় তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি তাই পুর্নবহালের সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে তুহিন রেজাকে পদায়ন করা হয়। পরে গত বছর ১১ মার্চ ৩১৯তম পর্ষদ সভায় তাকে এমডি নিয়োগ করা হয়। এই নিয়োগের বিষয়ে সে বছরের ১২ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। ২৫ জুন তা নাকচ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ২৮ জুন তুহিন রেজাকে এমডির বিষয়ে পুনরায় অনাপত্তি চায় ফার্স্ট ফাইন্যান্স। তাও নামঞ্জুর করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সবশেষ চলতি মাসের ৩ তারিখ তুহিন রেজার এমডি হিসেবে অনাপত্তির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ। কিন্তু তা নামঞ্জুর করে গত ১৫ মার্চ চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই চিঠিতে দ্রুত নিয়মিতি এমডি নিয়োগ দিতে পষর্দের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিরূপ শ্রেণিকৃত ঋণ হার ও মুনাফা পর্যালোচনায় নিট মুনাফা ঋণাত্বক। ধারাবাহিকভাবে এটি রেড জোনে রয়েছে। মন্দ বা খেলাপি ঋণও সন্তোষজনক নয়।
২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট ফাইন্যান্স দীর্ঘ দিন ধরে জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে। গত সাত বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ফেসভ্যালুর চেয়ে কমে ৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৭ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।
এসআই/জেএস