কার্বনেটেড বেভারেজে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করার দাবি
নতুন অর্থবছরে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ বা ৮ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে কোমল পানীয়ের দাম বাড়বে ৩০ শতাংশেরও বেশি। এ খাতে ইতোমধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পরোক্ষ কর দিতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই কার্বনেটেড বেভারেজে ন্যূনতম ১ শতাংশ কর আরোপের দাবি জানিয়েছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।
বুধবার (১৪ জুন) হোটেল শেরাটনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। সম্মেলনে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর খসড়া নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করে ফিকি।
বক্তারা বলেন, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এই আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক। আমরা আশা করেছিলাম নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া। এই অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের ওপর করের বোঝা, আমদানিকরা পণ্যের সরবরাহ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি কোম্পানির ওপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তী সময়ে কর্মচারীদের উপার্জনের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া করের চেতনার বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি বিদেশি ঋণের সুদের ওপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার দ্বারা আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ দিতে ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অনুনমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া উচিত।
খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে ডব্লিওপিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডিভিডেন্ড থেকে আয়ের ওপর আর কোনো ছাড় পাবেন না। লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স (এলএফএ) এখন থেকে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা কি আদৌ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে কি না এবং সেটা থেকে কর ছাড় পাওয়া যাবে কি না সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা নেই। মিউচুয়াল ফান্ড/ইউনিট তহবিল এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বেসরকারি স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে কর আরোপ করা কর্মীদের আয় হ্রাস করবে এবং সরকারি ভবিষ্যৎ তহবিলকে করমুক্ত হিসেবে রাখার বিষয়টি বৈষম্য সৃষ্টি করবে।
বক্তব্যে ফিকি সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, আমাদের সরকার যে প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে তা প্রশংসনীয়। তবে কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে পারে এমন সমাধানের বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে। আমরা আশা করি যে সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং চেম্বারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন রেখে কর-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফিকির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশিদ, জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি দিপাল আবেবিক্রম, নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবীর প্রমুখ।
ওএফএ/এসএম