জীবিত প্রমাণের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন পেনশনাররা
পেনশনারদের জন্য পাইলট ভিত্তিতে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক জীবিতাবস্থা যাচাইকরণ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর ফলে পেনশনাররা বছরে একবার ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পাবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী ছাড়াও সব অবসরভোগী সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী (৮.৩৬ লাখ) ইএফটির মাধ্যমে মাসের শুরুতেই পেনশন পাচ্ছেন। এর ফলে পেনশন প্রাপ্তিতে দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে এবং দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। পেনশনারদের জন্য পাইলট ভিত্তিতে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক জীবিতাবস্থা যাচাইকরণ (লাইফ ভেরিফিকেশন) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। অচিরেই সারা দেশে সব পেনশনারের জন্য এ অ্যাপ ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এর ফলে পেনশনাররা বছরে একবার ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হবেন এবং তাদের দুর্ভোগ ও কষ্ট লাঘব হবে।
‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিকেল ৩টায় তিনি ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে বাজেট পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। তারপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
বাজেটে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর ভরসা করছে সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ (অনুদান ছাড়া) দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম আর বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ২৬ জুন অনুমোদন করা হবে। তার আগে বাজেট নিয়ে সংসদে ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। নতুন অর্থবছর চলবে নতুন বাজেটের বরাদ্দ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী।
এসএইচআর/এসএসএইচ/