ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে কম সুদে ঋণ পাবেন গ্রামীণ উদ্যোক্তারা
বর্তমানে দেশে ডিজিটাল অর্থনীতিতে অভাবনীয় বিপ্লব এসেছে। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীকে এই সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং। ব্যাংকিং সেবার আরও প্রসারে এসব সেবা আরও বড় ভূমিকা পালন করবে। এমনকি স্বল্প সুদ ও অন্যান্য সুবিধার কারণে এক সময় ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জায়গা নিতে পারে এই সেবাগুলো। আর ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক অনিয়মও অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
বৃহস্পতিবার(২৫ মে) গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল আর্থিক সেবার সুযোগ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতিতেও এখন বিপ্লব এসেছে। অর্থনীতির অনেক অংশজুড়েই এখন মোবাইলের অবস্থান। আমার ধারণা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সারাদেশে বেশিরভাগ লেনদেন সম্পন্ন হবে ক্যাশলেস মাধ্যমে। আর মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন হলে তার একটা পদচিহ্ন রয়ে যায়। যার মাধ্যমে অনিয়ম দুর্নীতি শনাক্ত করা আরো সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতেও তার প্রভাব আছে। এছাড়া গত পাঁচ দশকে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু মানুষের পক্ষে ঋণ পাওয়া ছিল বড় কঠিন। ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সুদহার অনেক বেশি হওয়ায় মানুষের পক্ষে সেই ঋণ নেওয়া কঠিন। সেই সমস্যা নিরসনে এজেন্ট ব্যাংকিং বড় ধরনের সমাধান নিয়ে এসেছে, দেশজুড়ে স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে তারা।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথাগত শাখা ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং অনেক সাশ্রয়ী। লেনদেন প্রতি স্থায়ী খরচ অনেকটাই কম, ফলে স্বল্প আমানতসম্পন্ন হিসাব থেকে ঘন ঘন লেনদেন করা হলেও মুনাফার হার ভালোই থাকে।
করোনার সময় দেখা গেছে, প্রথাগত ব্যাংকিং নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও এজেন্ট ব্যাংকিং সচল ছিল। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নারী গ্রাহক অনেকটাই বেড়েছে। সাংস্কৃতিক কারণে নারীদের চলাচল যেসব অঞ্চলে সীমিত, এজেন্ট ব্যাংকিং সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে আরও আলোকপাত করেন পিআরআইয়ের পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের সুদহার ২৩–২৪ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি। অথচ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এমনকি এমএফএস কোম্পানিগুলো এর চেয়ে অনেক কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। ফলে সম্ভাবনা আছে, ডিজিটাল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের হটিয়ে গ্রামাঞ্চলে অর্থায়নের উৎস হয়ে উঠবে।
এক জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ পরিবারের এমএফএস হিসাব আছে। নারীদের তুলনায় পুরুষদের এমএফএস হিসাব বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব রয়েছে ১৮ শতাংশের।
বজলুল হক খন্দকার জরিপের সূত্রে বলেন, ৯১ শতাংশ উদ্যোক্তা পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সঞ্চয় দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ছাড়াই। কিন্তু ব্যবসার বিকাশে অতিরিক্ত অর্থায়ন দরকার বলে উদ্যোক্তারা মনে করেন।
তিনি বলেন, ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো সেই চাহিদা মেটাতে পারলে গ্রামাঞ্চলে অর্থনীতির বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্টের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ হয়েছে ৩১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগই জমা করেছেন গ্রামাঞ্চলের জনগণ। অন্যদিকে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮৫১ কোটি। মার্চ মাসে ২৫৭৮ কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। হিসাব বলছে বর্তমান দেশের ২১ হাজার ৯৯টি আউটলেট রয়েছে। তাতে ১৫ হাজার ৪০৯ জন এজেন্ট রয়েছে।
এমআই/এমজে