কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, আলুর ১০
চিনির পর এবার অস্থির পেঁয়াজ ও আলুর বাজার। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের অজুহাতে ঈদের পর থেকে প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চিনি ও পেঁয়াজের দেখাদেখি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতি কেজি আলুর দামও বাড়িয়েছেন অন্তত ১০ টাকা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচা, রামপুরা এবং বাড্ডা এলাকার বাজার ও সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় প্রকার ভেদে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। যা ঈদের আগেও বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। সেই হিসেবে ঈদের পর পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
এদিকে সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। অথচ ঈদের আগে প্রতি কেজি সাদা আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে আলুর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, আজ রাজধানীতে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। এই আলু এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। আর এক মাস আগে ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি। আর এক বছর আগে ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা কেজি। সেই হিসেবে এক বছরের আগের সঙ্গে তুলনায় করলে সাদা আলু কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
পেঁয়াজের বাজার সম্পর্কে বলা হয়েছে, আজ রাজধানীতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এক মাস আগে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আর এক বছর আগে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি।
আজ আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এক মাস আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। আর এক বছর আগে ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি।
মধ্য বাড্ডায় ভ্যানে করে পেঁয়াজ ও আলু বিক্রি করছেন বরিশালের লালু মিয়া। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ও আলুর কেজি ৩৫ টাকা। দুদিন আগেও আলু বিক্রি করেছি ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। আজকে বিক্রি করছি ৩৫ টাকায়। শুনতেছি, আরও নাকি দাম বাড়বে।
মধ্য বাড্ডার ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের মালিক আব্দুল বারেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫৫ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজের দাম বাড়তি।
কী কারণে বাড়তি? এর জবাবে তিনি বলেন, আমদানি বন্ধ এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের অভাব। তাই বেশি দামে বিক্রি করছে আড়তদাররা। আমরা আড়ত থেকে বেশি দামে কিনেছি, এখন বেশি দামে বিক্রি করছি।
মেরুল বাড্ডায় স্বপ্ন সুপারশপে গিয়ে দেখা গেছে, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আর আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজিতে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে এখন ডাকাতি চলছে। দুদিন আগেও ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি, আজকে ৬০ টাকা ছাড়া দিচ্ছে না। বলছে ৫ কেজি নিলে ৫৫ টাকা করে রাখবে। এটা কী মানা যায়? আমরা কোন দেশে বসবাস করি! ব্যবসায়ীদের এই ডাকাতি কী দেখার কেউ নেই?
বাজারটিতে আলু কিনতে আসা আয়েশা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০ টাকার আলুর দাম ৪০ টাকা। বাড়িতে আলু বিক্রি করেছি ১০ টাকা কেজিতে। এখন ৪০ টাকায় কিনে খাচ্ছি, এটা কী মানা যায়! ব্যবসায়ীরা আমাদের টাকা হরিলুট করে নিচ্ছে। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি কিন্তু কিছু করতে পারছি না।
বাজারের আল-আমিন জেনারেল স্টোরের মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের পর ৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনে বিক্রি করেছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আজকে কেনাই পড়েছে ৪৮ টাকা কেজি। খরচসহ ৫২-৫৩ টাকা পরবে। বিক্রি করছি ৬০ টাকায়।
একই বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী নিয়াম উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাদা আলু ৪০ টাকা ও লাল আলু ৫০ টাকা। তবে যদি ৫ কেজি নেন কিছু কম রাখা যাবে। আলুর দাম বাড়লে কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে আলু নেই।
রামপুরা বাজারে ক্রেতা ছাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন আলুর দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কারণ এখন আর কৃষকদের কাছে আলু নেই। যা ছিল সব বিক্রি করে দিয়েছে। সব আলু ব্যবসায়ীদের হাতে। তাই এখন দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে ফতুর করছে।
পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে কেন জানতে চাইলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী হাজী মাজেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। উৎপাদনের পর থেকে এই পর্যন্ত অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, দুই তিনদিন আগেও পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করেছি ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। আজকে বিক্রি করেছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে দেবে। তারপর থেকে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
সূত্র জানায়, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫-৩৬ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। গত একবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আট লাখ মেট্রিক টন।
অপরদিকে দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টন। গত বছর (২০২১-২২ মৌসুম) উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ১০ লাখ টন আলু। পূরণ হয়েছে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রাও। এবছরও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু তারপরও আলু নিয়ে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এমআই/কেএ