ফলের দাম আকাশচুম্বী, শুনে ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতা
ফলের দোকানে ক্রেতা আসছেন, তবে কিনছেন না। কেউ কেউ দরদাম করছেন আর কেউ কেউ দাম শুনে কিছু না বলে চলে যাচ্ছেন।
রোজার দ্বিতীয় দিনে (২৫ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ ফলের দোকান ফাঁকা, দোকানিরা নিজেরা বসে বসে খোশগল্প করছেন। যখনই কোনো ক্রেতা আসছেন পাশাপাশি থাকা সব দোকানের কর্মচারী এক যোগে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। বলছেন, ‘আমার দোকানের মাল সবচেয়ে ভালো।’ ক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ অল্পকিছু ফল কিনছেন।
কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কমলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। প্রকারভেদে আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় এবং আনার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে।
এছাড়া তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। বেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। কলার (চাম্পা) হালি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, পেয়ারা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কুল ৮০-১০০ টাকা, সফেদা-আতাফল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ বাজারে ফল কিনতে আসা আয়েশা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাল-ডালের চেয়ে ফলের দাম বেশি। আজ বাড়িতে মেহমান আসবে তাই কিছু ফল কিনলাম। তিনি বলেন, প্রতি বছর রোজার প্রথম সপ্তাহে ফল কিনতে হয়। গত বছর ৪ কেজি মাল্টা, ৫ কেজি আপেল কিনেছি। এবার ফলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে, তাই ২ কেজি মাল্টা আর ৩ কেজি আপেল কিনেছি।
মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান রিপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেলা ১১টায় দোকান খুলেছি। এখন পর্যন্ত (দুপুর দেড়টা) ১৫শ টাকার ফল বিক্রি করেছি। কাস্টমার নেই তেমন। যে দু-চারজন আসে তারাও দাম শুনে চলে যায়। তিনি বলেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এবার ফলের দাম বেড়েছে।
শান্তিনগর বাজারে ফল কিনতে আসা সামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর ক্রাউন আপেল কিনেছি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে। আজ কিনতে এসেছি, দাম চাইছে ২৬০ টাকা। বাজারটিতে ফুজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। আগের বছর এই আপেল বিক্রি হয়েছিল ২১৫ থেকে ২২৫ টাকায়।
এই বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবারের রোজায় গতবারের তুলনায় কেজিপ্রতি ফলের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ায় মানুষ ফল কম কিনছে। অনেকে দাম শুনেই চলে যাচ্ছে।
মগবাজারে ফলে কিনতে আসা মনিরুজ্জামান অনিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০-১৫ দিন আগেও ১৮০ টাকা কেজিতে মাল্টা কিনেছি। কিন্তু আজ বলছে ২২০ টাকা। আপেল-কমলার দাম আরও বেশি। তাই আর কিছু কিনব না।
দাম বাড়ায় ক্রেতা কমেছে বলে জানান মগবাজারের ফল ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ সাদিক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকাল থেকে মাত্র ২ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। ক্রেতা নেই, বিক্রিও নেই। আমরা বসে বসে গল্প করছি।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলসি জটিলতায় এবার ফল আমদানি কম হয়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের এনায়েত ব্রাদার্সের মালিক এনায়েতুর রহমান বলেন, ইফতারে যেসব ফলের চাহিদা বেশি থাকে তার মধ্যে বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। বিদেশি ফলকে ‘বিলাসপণ্য’ দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় সব ফলের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। বাড়তি দামের প্রভাব বিক্রিতে পড়েছে।
এমআই/এসএসএইচ/