ইউনিলিভার বাংলাদেশের সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন হাই কমিশনারের
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইউবিএল) সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খানসহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় নিত্যব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ, অলাভজনক সামাজিক উদ্দেশ্যমুখী প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেন্ডশিপ’কে সঙ্গে নিয়ে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেবার লক্ষ্যে ২০০১ সালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণসহ একটি ভাসমান আবাসিক হাসপাতাল নির্মাণ করে। লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে রয়েছে একটি পরিপূর্ণ প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ইউনিট। এ হেলথ কেয়ার ইউনিটে দুইটি অপারেশন থিয়েটার, একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি এবং একটি ডিজিটালাইজড এক্স-রে রুমসহ সেকেন্ডারি হেলথ কেয়ারের সুবিধা সমূহ রয়েছে।
লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য মেডিকেল স্টাফরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন এবং তারা ‘গাইনোকোলজি’, ‘ডেন্টিস্ট্রি’, ‘অপথালমোলজি’, ‘পেডিয়াট্রিক্স’, এবং ‘জেনারেল মেডিসিন’ ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধও বিতরণ করা হয়।
বিগত ২০ বছরে এ হাসপাতাল ৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৮২ জন রোগীকে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭১টি’র অধিক সেবাপ্রদান করেছে। নিয়মিত বহিরাগত রোগীদের চিকিৎসা (আউটপেশেন্ট সার্ভিস) ছাড়াও লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মেডিকেল টিমের সমন্বয়ে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের জন্য ৪১৬টি বিশেষায়িত হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে এবং এসব ক্যাম্পের মাধ্যমে রোগীদের জীবন বদলে দেওয়ার মতো ১৬ হাজার ৩৮৫টি সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল চরাঞ্চলের ১৫ লাখের বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসনের সামনে এই দুর্গম চরাঞ্চলে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। প্রতিনিধি দল এ মহৎ উদ্যোগের অব্যাহত পথচলা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি বিগত দুই দশকে কাজে সম্পৃক্ত সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোগী ও উপকারভোগী সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দল ‘সামাজিক ব্যবসা’, ‘গভর্ন্যান্স’, ‘শিক্ষা’, ‘নারী ক্ষমতায়ন’ ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে ঘুরে দেখেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, ‘বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ইউনিলিভারের লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল আশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে বেড়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ২০ বছরে প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর সঙ্গে ইউনিলিভারের এই অংশীদারিত্ব অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি সব সময় উপলব্ধি করতে পারা আনন্দের যে- একটি ব্রিটিশ বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসায়ের মাধ্যমে কেবল অর্থনীতির ভিত-ই শক্ত করছে না, পাশাপাশি একটি দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে যুক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে উপযুক্ত সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে জাতি বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছে। লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এর মতো উদ্যোগগুলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন বদলে দেওয়ার মতো প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি আশা করছি।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) এর সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সবার জন্য টেকসই বাসযোগ্য বিশ্ব তৈরিতে অবদান রাখা। আমরা প্রধান যে উপায় সমূহে এ কাজটি করে থাকি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- মানুষের সুস্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। আমাদের উদ্দেশ্য-চালিত ব্র্যান্ডগুলো, যেমন- লাইফবয় দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাত এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছে। মান-সম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও বাংলাদেশের দূরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা সেবা পেতে সমস্যার মুখোমুখি হন।
তিনি বলেন, ২০ বছর আগে এ বিষয়টি উপলব্ধি করে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল গড়ে তুলতে আমরা ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি করি- এ হাসপাতালটি সুবিধাবঞ্চিত বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। আমি বিগত ২০ বছর ধরে ৬ লাখ ৫৭ হাজার রোগীর জীবনমান উন্নয়নে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা দেশের এবং দেশের বাইরের স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের পরিশ্রম ও তাদের দায়বদ্ধতার প্রশংসা করছি। এ স্বাস্থ্যসেবা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন জনগোষ্ঠীর কাছে সহজে ও সাশ্রয়ীভাবে পৌঁছে দিতে ইউনিলিভার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এমএ