বছরের শুরুতে বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ
নতুন বছরের শুরুতে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম ১৩ দিনে ৯২ কোটি ৮৬ লাখ (৯২৮ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৭ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১২ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার, বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১ লাখ মার্কিন ডলার।
আরও পড়ুন >> ঋণ নিয়ে আলোচনা করেনি আইএমএফ
এ সময়ে সাত ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারেনি। এগুলো হলো- বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কর্মাশিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। এই অংক ২০২১ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় ৭ কোটি ডলার বেশি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৩ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন >> একটা ধাক্কায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পড়ে যাবে না : গভর্নর
রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৬ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ২৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার বেশি এসেছে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা।
আরও পড়ুন >> ইচ্ছেমত সুদে আমানত নেওয়ার সুযোগ, বাড়বে ভোক্তার সুদও
বিদায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
রিজার্ভ ৩২.৫১ বিলিয়ন ডলার
ডলার সংকটের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হয়, তাহলে রিজার্ভ আরও ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার কম হবে। সেই হিসেবে, এখন প্রকৃত রিজার্ভ ২৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ আগে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে আমদানির জন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করছে। অর্থাৎ এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করা যাবে। যদিও রিজার্ভ সবসময় সব আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। শুধু সরকারি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর পর তা বেড়ে হয় ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আরো বেড়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে দেশের রিজার্ভ। এরপর তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়; যা ছিল দেশের ইতিহালে সর্বোচ্চ রিজার্ভ। তারপর থেকেই ডলার সংকটে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
এসআই/জেডএস