আয় নেই, মূলধন ভেঙে খাচ্ছে ব্লুমিন্যান্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট
আয় নেই, কমেছে সম্পদও। তাই খরচ চালাতে এখন মূলধন ভেঙে খাচ্ছে ব্লুমিন্যান্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি এখন লোকসানে পড়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়, কোম্পানিটি কোনো নিয়ম-নীতি মানছে না। বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষক দিয়ে অডিট করছে না। কোনো আর্থিক প্রতিবেদনও রাখছে না। আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানিটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানাও করেছে বিএসইসি।
বিএসইসির বিধিমালা,২০০১ এর ধারা ৭৫-৭৯ অনুসারে গত ১৩ জানুয়ারি বিএসইসির পরিদর্শক দল কোম্পানিটি পরিদর্শন করে। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়, গত তিন বছর ধরে কোম্পানির সম্পদ বৃদ্ধির পরিবর্তে কমছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে কোম্পানির সম্পদ ছিল ৪ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৪০৬ টাকার। ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮১ লাখ ১৬ হাজার ৩১১ টাকায়। সেখান থেকে আরও কমে ২০২১ সালে কোম্পানির সম্পদ মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩১ টাকায়।
সম্পদ কমার সঙ্গে কোম্পানির আয়ও কমছে। প্রতিবেদেন বলা হয়, ২০১৯ সালে কোম্পানির লোকসান ছিল ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৯৪ টাকা। ২০২০ সালে লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৯ টাকায়। তার পরের বছর লোকসান আরও বেড়ে হয় ১ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৯ টাকা।
বিএসইসির পরিদর্শক দল জানায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিধিমালা ২০০১, এর ২৭ (১) এর নিয়ম ভেঙেছে প্রতিষ্ঠানটি। নিবন্ধন নেওয়ার সময় কোম্পানির যে মূলধন ছিল সেখান থেকে অর্থ নিয়ে তারা ভেঙে খাচ্ছে। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা নেই।
প্রতিবেদন বলা হয়, পরিদর্শন দলের কাছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোনো নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দেখাতে পারেনি। আরও শঙ্কার বিষয় কোম্পানির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন এমনকি বার্ষিক অপারেশন অ্যাক্টিভিটিসের কোনো প্রতিবেদন কমিশনকে দেখাতে পারেনি; যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিধিমালা ২০০১, বিধি ৩৩(৩) ও ৩৩(৪) লঙ্ঘন।
এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে ২১ এপ্রিল শুনানিতে ডাকা হয়। শুনানিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার সময় তাদের বেশিরভাগ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খরচ মেটাতে মূলধন থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে। এক বছরের মধ্যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
আর্থিক প্রতিবেদনের জমা না দেওয়ার বিষয়ে কোম্পানি বিএসইসিকে জানিয়েছে, আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে তারা সচেতন ছিল না। এখন থেকে ৩, ৬ এবং ৯ মাসের পাশাপাশি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনও নির্ধারিত সময়ে কমিশনে জমা দেবে।
বক্তব্য শোনার পর কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে চলতি বছরের ২২ আগস্টের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকায় উন্নীত করতে নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। নির্দেশনায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূলধন বাড়াতে ব্যর্থ হলে ৫ লাখ টাকা জরিমানার কথাও বলা হয়। চলতি বছরের ২২ আগস্ট নির্ধারিত সময়ে পার হওয়ার একদিন পর ২৩ আগস্ট কোম্পানির পক্ষ থেকে জরিমানা মওকুফের জন্য বিএসইসিতে আবেদন করা হয়।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকায় উন্নীত না করায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি অনান্য আইন লঙ্ঘনের কারণে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
এমআই/এনএফ