রাসেলের মুক্তিতেই ঝুলছে ইভ্যালির গ্রাহকদের ভাগ্য
সার্ভার জটিলতার কারণে ইভ্যালির গ্রাহকদের টাকা আটকে আছে। আগের অর্ডার করা পণ্য ও রিফান্ডের অর্থ ফেরত দেবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য প্রথমে সার্ভার খোলা জরুরি। কিন্তু ইভ্যালির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল কারাগারে থাকায় সার্ভার খোলা জটিল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ গ্রাহকের দেনা-পাওয়া পরিশোধ করতে পারবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট দিন তারিখও বলতে পরছে না প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ইভ্যালির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।
আদালতের নির্দেশনায় নতুন করে শামীমা নাসরিনের নেতৃত্বে ইভ্যালি চালু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আগের অর্ডার, রিফান্ড এবং ডেলিভারি সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শামীমা নাসরিন বলেন, আমাদের সার্ভারের জটিলতার কারণে গ্রাহকদের টাকা আটকে আছে। সার্ভার জটিলতা কাটাতে অ্যামাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যদি আমাদের সাবেক এমডি রাসেল বাইরে থাকতেন তাহলে বিষয়টি সহজ হতো। সার্ভার খোলার জন্য অ্যামাজনের সঙ্গে রাসেলের সরাসরি কথা বলা দরকার। কারণ অ্যামাজনের সঙ্গে আমাদের সব কার্যক্রম চালিয়েছে রাসেল। তাই তার জামিন হলে এটি সহজে কাজ করা যাবে।
সার্ভার খুলতে পারলেই আটকে থাকা টাকা দিতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সার্ভার খুলতে পারলেই আগের অর্ডার তথা পণ্য ক্রমান্বয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ১ বছর ব্যবসা করতে পারলে সব দেনা পরিশোধ সম্ভব : শামীমা
শামীমা নাসরিন বলেন, আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আমাদের কর্ম পরিচালনায় হাইকোর্ট থেকে নিয়োজিত দুজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর নিয়োজিত রয়েছেন। এসময় যেকোনো শর্তে রাসেলের জামিন চাইবেন বলে জানান তিনি।
আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করবেন জানিয়ে ইভ্যালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেন, যদি ব্যবসা শুরু করতে পারি তাহলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রথম দিন থেকেই লাভে পণ্য বিক্রি করব। এক বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করতে পারলে দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে জানান শামীমা নাসরিন।
ইভ্যালি নতুন বিনিয়োগ পেয়েছেন কি না। পেলে কত টাকা পেয়েছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গ্রেপ্তারের পর অনেক বিনিয়োগকারী যোগাযোগ করেছিল। এখন আবার যদি ব্যবসা শুরু করি তাহলে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা আসবেন।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শামীমা নাসরিন জানান, ইভ্যালির ৪৫ লাখ ক্রেতা এবং ৩০ হাজার বিক্রেতা দৈনন্দিন প্রয়োজনে নিয়মিত কেনাকাটা করলে খুব সহজেই ইভ্যালিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা সম্ভব।
তিনি জানান, তার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ৪শর অধিক বিক্রেতা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে এফিডেভিটের মাধ্যমে ইভ্যালিতে নতুন করে পণ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন এবং ইভ্যালিকে সচল করে তাদের ব্যবসা করার ক্ষেত্র তৈরির আবেদন জানিয়েছেন। হাইকোর্ট ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বার্থরক্ষায় সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে যেন ইভ্যালি পরিচালনা করা হয় সেই লক্ষ্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন।
ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, এখানে ই-ক্যাব থেকে মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন শিপন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. কাজী কামরুন নাহার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে বোর্ডে আছেন। আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারি, পিক অ্যান্ড পে এবং ক্যাশ বিফোর ডেলিভারিতে পণ্য বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
শামীমা নাসরিন বলেন, আমরা মুনাফা না করে একটি পণ্যও বিক্রি করব না। সেই সঙ্গে ক্রেতার পণ্য ক্রয়ের অর্থ সরাসরি বিক্রেতা সংগ্রহ করবে।
আরও পড়ুন: আমরা যেকোনো শর্তে রাসেলের জামিন প্রার্থনা করব : শামীমা
তিনি বলেন, গ্রাহকদের পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি ও পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা রিফান্ড করার ক্ষেত্রে আমাদের যথাযথ পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তার জন্য সর্বপ্রথম ইভ্যালির সার্ভার ওপেন করা আবশ্যক। সার্ভার আইডি কোড একটি জটিল নম্বর এবং সচরাচর ব্যবহৃত হয় না। এটি আসলে মুখস্ত থাকার বিষয় না। এটি হারিয়ে যাওয়ার ফলে রিকভারি করা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি অ্যামাজনের সঙ্গে কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল সরাসরি কথা বলতে পারতেন তাহলে হয়ত একটি সমাধান আসত। কিন্তু বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকায় পুরো প্রক্রিয়াটি জটিল রূপ ধারণ করেছে। তবে আশা করি অচিরেই এ বিষয়ে সমাধান হবে।
সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের মানি লন্ডারিং বিষয়ে অভিযোগের জবাবে শামীমা বলেন, সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অডিট শুরুর আগেই মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতি মাসে দুবাই যেতাম। অথচ ইমিগ্রেশন অফিসে তিনি যাচাই করলেই জানতে পেতেন যে আমরা সর্বমোট দুই বার দুবাই গিয়েছি ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধি এবং নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজার লক্ষ্যে।
সর্বশেষ অডিট ফার্ম রিপোর্ট অনুযায়ী, তথ্য ঘাটতির জন্য অডিট সম্পূর্ণ করা যায়নি বলা হয়েছে। এর অর্থ কখনোই মানি লন্ডারিং বলা সমীচীন হবে বলে মনে করি না। বিগত দুই বছর যাবত বিএফআইইউ এবং অন্যান্য সরকারি কোনো সংস্থা এখন পর্যন্ত ইভ্যালিতে মানি লন্ডারিং হয়েছে— এমন কোনো তথ্য পায়নি বলে দাবি করেন শামীমা নাসরিন।
অনেকে জানতে চেয়েছেন গ্রাহক আগের কোনো অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি পাবেন কি না— এ বিষয়ে তিনি জানান, ইভ্যালির গোডাউনে প্রায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। এই পণ্য দিয়ে অতীতের সব দায় মেটানো অসম্ভব না। তবে এটুকু পণ্য দিয়ে যতটা সুষম বণ্টন সম্ভব সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে পণ্যগুলো সার্ভার অন করার সঙ্গে সঙ্গে ডেলিভারি করা হবে।
শামীমা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের যত মামলা হয়েছে সেগুলো খুবই সামান্য পরিমাণের, সর্বমোট প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনার মামলা হয়েছে। তবে অধিকাংশ গ্রাহক কিন্তু ইভ্যালির ওপর আস্থা রেখেছেন। মো. রাসেল যেসব মামলায় আটক হয়েছেন সেগুলো সর্বমোট ১.৫ কোটি টাকার মামলা। যারা মামলা করেছে শুধু তাদের টাকা ফেরত নয়, আমরা সবার অর্থই ফেরত দিতে চাই। আমরা যেহেতু বিজনেস করার সুযোগ পেয়েছি, সেহেতু মহামান্য আদালত লাখ লাখ গ্রাহক এবং বিক্রেতার স্বার্থে শিগগিরই মো. রাসেলকে জামিন দেবেন বলে আশা করছি। আমরা যেকোনো শর্তে জামিন প্রার্থনা করব। মোট আটটি মামলায় মো. রাসেল আটক রয়েছেন। এছাড়াও চেকের কিছু মামলা, যেগুলো জামিনযোগ্য সেগুলোর জামিন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরকম মামলার সংখ্যা ১৫টি। আমরা সবাই কামনা করছি যেন অতি শিগগিরই এ ব্যাপারে কোনো পজিটিভ আপডেট আমরা দিতে পারি।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির ক্রেতা সাকিব হাসান। এসময় বক্তব্য দেন ইভ্যালির সেলার মো. নাসির উদ্দিন, মো. ফয়সাল ইসলাম প্রমুখ।
এসআই/এসএসএইচ